দুজনের নাম নরেন। এক নরেন বিশ্বজুড়ে হিন্দুধর্মের মিলন সঙ্গীতের গান গেয়েছিলেন। আর এক নরেন ও তাঁর দল দেশজুড়ে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার গুরু দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। এক নরেনের জন্য বিশ্বের দরবারে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছিল। আর দ্বিতীয় নরেনের কুকীর্তির জন্য দেশের মুখে চুনকালি লেগেছে।
অবশ্য চুনকালি যে এই প্রথম লাগল তা নয়। নরেন যখন কোনও একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সেই সময় দেশ সাক্ষী ছিল এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের। বেছে বেছে মুসলিমদের কোতল করা হয়েছে। নরেন এবং তাঁর সঙ্গীদের হাত ভিজেছে তাজা রক্তে। তার জন্য কলির নরেন বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন। এতটুকু অনুশোচনা নেই।
অনুশোচনা না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, অনুশোচনা তো তার হয়, যার মধ্যে মনুষ্যত্ব বলে কিছু থাকে। অনুশোচনা তো তাঁর হয় যাঁর বিবেক আছে। ওই নরেনের বিবেক ছিল। এই নরেনের বিবেক বলে কিছু নেই।
দুই নরেনই অধিষ্ঠাত্রী দেবতা কিন্তু রাম। এক নরেন রামকৃষ্ণের পুজো করতেন। কলির নরেন রামায়নের রামকে পুজো করেন। কিন্তু তারা কি কোনওকালে বলেছিলেন পরধর্মের মানুষকে ঘৃণা করতে? পরধর্মের মানুষকে অশ্রদ্ধা করতে? পরমতকে অগ্রাহ্য করতে? নিজের ইচ্ছা অন্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দিতে?
রামায়নের রামের ভক্ত ছিলেন গান্ধিজি। তিনি হিংসার বদলে দেশজুড়ে অহিংসার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, সহিংস না হয়েও আন্দোলন সম্ভব। কিন্তু কলির রামভক্ত নরেন এবং তাঁর দলবল ওসবে বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে হিংসায়। বিশ্বাস করে গা জোয়ারিতে। গুজরাত দিয়ে শুরু। সেখান থেকে অযোধ্যা। এখন কর্নাটক।
এক হিজাব পরা নিয়ে যা হচ্ছে, তা যে লজ্জাজনক তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু কলির নরেন কি আদৌ লজ্জিত?