সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
আন্তর্জাতিক নারীদিবসের প্রাকলগ্নে নজরুলের এই কবিতার কথা মনে পড়ে। কবিতায় গাওয়া হয়েছে সাম্যের গান। অর্থাৎ, সমাজে একজন মহিলার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, গুরুত্ব রয়েছে একজন পুরুষেরও। বর্তমান সময়কে বলা হয় সমতার যুগ। কিন্তু আদৌ কী সমতা রয়েছে? সর্বত্রই তো অসাম্যের চিত্র। তা সে রাজনীতির আঙিনাই হোক বা চাকরিক্ষেত্র। মহিলাদের যে কোনও উপায়ে নতজানু হতে বাধ্য করা হয়। এটা আরও বেশি দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে হয়, আজকের দিনেও
বিয়ের বিজ্ঞাপনে পাত্রীর সম্পর্কে লিখতে গেলে তার রক্তের গ্রুপের উল্লেখ থাকে না, থাকে তাঁর গায়ের রঙের কথা। অর্থাৎ, সে ফর্সা না কালো, না শ্যামলা। বর্ণবাদ স্পষ্ট। বাজারে বিক্রি হয় নানা রকমের ফেয়ারনেস ক্রীম, যা ব্যবহার করলে নাকি গায়ের রঙ উজ্জ্বল হবে। এ বছর নারী দিবসের স্লোগান নারীর সমতা, সকলের প্রগতি।একজন নারীর গর্ভেই তো একজন পুরুষের জন্ম হয়। তারপরেও সে কী করে অত্যাচারী হয়ে ওঠে? কেন আজকের দিনে আদালতে এক বৃদ্ধা মাকে তাঁর গর্ভজাত পুত্রের বিরুদ্ধে মামলা করতে হয়? কেন প্রেম প্রস্তাবে রাজি না হলে তাঁকে অ্যাসিড হামলার শিকার হতে হবে? আর প্রতিদিন যে নির্যাতনের পাল্লা ভারী থেকে অতি ভারী হয়ে উঠছে। সমাজ যেন ক্রমশই পশ্চাদগামী হয়ে উঠেছে। নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় রাষ্ট্রের? কিন্তু রাষ্ট্র কী সেই দায়িত্ব পালন করতে সফল হয়েছে? উত্তর না। আর সে কারণে হাতরাস। সে কারণে নির্ভয়া। কবে বন্ধ হবে এই শোষণ, তা আমরা জানি না। শুধু জানি, আগামী ৮ মার্চ ঘটা করে পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।