নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক সেনাবাহিনীকে সাহায্যের জন্য ‘আলবদর’ ও ‘আল শামস’ নামে দুই খুনে বাহিনী গঠন করেছিলেন জামায়াত ইসলামীর ত‍ৎকালীন প্রধান গোলাম আজম। গোটা মুক্তিযুদ্ধে ওই বাহিনীই ত‍ৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে নারকীয় নির্যাতন চালিয়েছিল। লক্ষ-লক্ষ হিন্দু মহিলাদের ধর্ষণ-খুন করেছিল। আর নব্বইয়ের দশকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জমানায় তাঁর ছেলে সেনা আধিকারিক আবদুল্লাহিল আমান আযমী স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে হিন্দু বিতাড়ন যজ্ঞ চালিয়েছিলেন। সংখ্যালঘুদের উপরে নির্মম অত্যাচার চালানোয় শেখ হাসিনা সেনাবাহিনী থেকে তাঁকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি জেলেও পুরেছিলেন। ক্ষমতার পালাবদল ঘটতে না ঘটতেই হিন্দু নিধন যজ্ঞের কুখ্যাত হোতাকে মুক্তি দিয়েছেন পাকিস্তানপন্থী সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। আর গোলাম আজম পুত্রের মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়। অতীতে গোলাম আজম পুত্রের কীর্তির কথা মনে করে ফের তাঁরা আতঙ্কে সিঁটকে পড়েছেন।

যে দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিলেন সেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতেই কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আবদুল্লাহিল আমান আযমী। মূলত সেনাবাহিনীতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এবং কট্টর হিন্দুবিরোধীদের নিয়োগ করার নীল নকশা কার্যকর করেছিলেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সেনাবাহিনীতে দির্দণ্ডপ্রতাপশালী হয়ে উঠেছিলেন গোলাম আজম পুত্র। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জুড়ে চলা হিন্দু নিধন যজ্ঞের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আবদুল্লাহিল আমান আযমীর বিরুদ্ধে। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সেনা সরকার গঠন হওয়ার পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে অভিষিক্ত হন তিনি। ক্ষমতার পালাবদলের পরে ২০১৬ সালের ২৩ অগস্ট  আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছিল। এতদিন সেনা হেফাজতেই ছিলেন তিনি।

কিন্তু সোমবার রাজনৈতিক পালাবদল ঘটার পরেই আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সেনাপ্রধানের উপরে চাপ দেন বিএনপি এবং জামায়াত নেতারা। সেই চাপের মুখে মঙ্গলবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয় নব্বইয়ের দশকে হিন্দু নিধন যজ্ঞের হোতাকে।