নিজস্ব প্রতিনিধি: নৈহাটির কালীপুজো মানেই বড়কালী। আর তার মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও জাগ্রত হলেন বড় মা। এতটাই যে এই পুজোর উদ্বোধনের মাধ্যমেই কালী আরাধনা শুরু হয় নৈহাটিতে। বড়মার পরই বিসর্জন হয় অন্য প্রতিমার। স্থানীয়দের বিশ্বাস মায়ের কাছে কোনও কিছু চাইলে ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তাই মায়ের আশীর্বাদ পেতে প্রতিবছর ভক্তের ঢল নামে কালীপুজোর আগে থেকেই। বর্তমানে বড় মার নাম ছড়িয়েছে রাজ্য ছাড়িয়ে দেশ ও বিদেশেও। প্রতি বছর ভক্তদের মনস্কামনা পূরণের পর যা দান পড়ে সেটা দিয়েই সোনা-রুপোর গহনা গড়িয়ে দেওয়া হয় বড় মা-কে। ২১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বিশাল ঘোর কৃষ্ণবর্ণ প্রতিমা স্বর্ণলঙ্কারে ভূষিতা। সোনার পাশাপাশি ভারী রুপোর গহনাও থাকে বড়মার গায়ে।
নৈহাটি বড়কালী পুজো কমিটির সদস্যদের দাবি, প্রায় একশো বছর আগে বড় মার পুজো শুরু করেন ভবেশ চক্রবর্তী নামে এক স্থানীয় পুরোহিত। জানা যায়, নৈহাটির নদিয়া মিলে কর্মরত ভবেশবাবু নদিয়ার নবদ্বীপে রাশ উৎসবে গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি বিশাল বিশাল মূর্তি দেখে আপ্লুত হন। এবং ফিরে এসে বড়কালীর পুজো শুরু করেন। প্রথমে এই পুজো ভবেশ কালী হিসেবেই পরিচিত ছিল। তবে এখন নৈহাটির বড় মা বলেই খ্যাতি পেয়েছে এই কালী। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর ভক্তরা বড়মার টানে পুজোর দিন নৈহাটিতে ভিড় জমান। তবে গত বছরের মতো এবারও বড় মার পুজোয় বেশি মানুষকে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। কোভিড বিধি মেনে এবারও পুজো করা হবে। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ভক্তরা পুজো ও অঞ্জলি দিতে পারবেন। পাশাপাশি দণ্ডি কাটা এবারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বড় মার পুজো ছাড়াও নৈহাটিতে আরও কয়েকটি বড় কালীর পুজো হয়। নৈহাটি অরবিন্দ রোডে লাইন দিয়ে পুজোগুলি হয়। তবে বড় মা এখানে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী। রেলস্টেশনের অপরপারে বিডিও অফিসে আরও বড় কালী প্রতিমার পুজো হয়। এছাড়া নৈহাটিতে জমকালো থিমের পুজোও হয়। যেমন নৈহাটি ৬ নম্বর বিজয় নগরের ‘নিউ স্টার ক্লাবে’র পুজোর থিম ‘কাঁটাতার’। আবার নৈহাটি থানার সংলগ্ন আরেকটি কালীপুজো হল লোহাঘাট পার্ক অ্যাসোসিয়েশনের পুজোতে এবারের থিমে আন্দামানের জারোয়া সম্প্রদায় মানুষের জীবনযাত্রা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। নৈহাটির ৭নম্বর বিজয় নগর অধিবাসী বৃন্দ কাঠগোলা পুজো কমিটির এবার থিম ‘ডোকরা শিল্পের আদলে গ্রাম বাংলার উৎসব। করোনাবিধি মেনেই এবার পুজো হচ্ছে নৈহাটিতে।