নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ক্রমে আরও ভয়াবহ হচ্ছে কেরলের বন্যা পরিস্থিতি। দক্ষিণের এই রাজ্যে বিগত দু’দিন ধরে একনাগারে চলছে বৃষ্টিপাত। আর মূলত সেই কারণেই কেরালের অধিকাংশ জেলা বর্তমানে জলের তলায়। রবিবার সকালেই জানানো হয়েছিল এই বন্যা এবং ভূমিধসের কারণে ইতিমধ্যেই কেরলে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন। কিন্তু বিকেলের মধ্যে সেই সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ২৬। নিখোঁজ এখনও ১৩ জন। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত এই ২৬ জুনের মধ্যে ১৩ জন কোটায়ামের বাসিন্দা। অন্যদিকে ইদুক্কি জেলায় ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন চারজন। আলাপ্পুজা জেলাতেও এই বন্যার কারণে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। জানা যাচ্ছে কেরলের এই তিন জেলাতেই বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শুধু তাই নয় জানা যাচ্ছে শুধুমাত্র কোটায়েম জেলাতেই ১১ জন এখনও নিখোঁজ। পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং উদ্ধার কাজের জন্য রবিবার সকাল থেকেই কেরলে নামানো হয়েছে সেনা। সঙ্গে রয়েছে জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সদস্যরা।
উল্লেখ্য, আবহাওয়া দফতরের তরফ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল কেরলে আগামী বেশ কয়েকদিন অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাষ অনুযায়ী শুক্রবার থেকেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে দক্ষিণের রাজ্যজুড়ে। প্লাবিত হয়েছে একাধিক জেলা। ভেঙে পড়েছে বাড়িঘর, উপড়ে পড়েছে গাছ। বন্যা কবলিত বহু এলাকার মানুষ বর্তমানে গৃহহীন হয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে রিপোর্ট অনুযায়ী, কেরলের দুর্যোগ এখনও কাটেনি। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আরও দুদিন ধরে এই দুর্যোগ চলবে। তারপর ধীরে ধীরে কমবে বৃষ্টির দাপট।
অন্যদিকে শনিবার সকাল থেকে উদ্ধারকাজে নেমেছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১১ টি দল। তারা মূলত দক্ষিণের দুটি রাজ্যে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। কারণ ওই দুই রাজ্যে ১১ জন এখনও নিখোঁজ বলে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে খবর, রবিবার বিকেল পর্যন্ত যে সমস্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজন শিশু রয়েছে যাদের বয়স ৪ থেকে ৮-এর মধ্যে। ওই তিনটি শিশুর মৃতদেহ যখন উদ্ধার হয় তখন দেখা গিয়েছিল তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ওই তিন শিশু একই পরিবারের সদস্য অথবা একে অপরের পরিচিত।
ভারতীয় সেনার তরফ থেকে জানানো হয়েছে ইতিমধ্যে কেরলের বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি নেভি হেলিকপ্টার আকাশপথে টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি দুটি MI-17 হেলিকপ্টার রাখা রয়েছে নিকটবর্তী বায়ুসেনা স্টেশনে। যাতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজ শুরু করা যায় তার জন্য ভারতীয় সেনার তরফ থেকেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেরলের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে রবিবার কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। টুইটারে একথা লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। কেরল প্রসঙ্গে এদিন তিনি লেখেন, ‘কেরলের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশদে জানতে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে কথা হয়েছে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। পাশাপাশি আহতদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি সকলের নিরাপত্তা এবং সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি। পাশাপাশি সমবেদনা তাঁদের পরিবারের জন্য যারা কেরলের এই প্রবল বর্ষণ এবং ভূমিধসের কারণে প্রাণ হারিয়েছেন।’
যদিও কেরল সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এবং নতুন করে কোনও ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি কিন্তু সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী কেরলের একাধিক বাঁধের জলের স্তর বাড়ছে। তাই যদি বৃষ্টির পরিমাণ না কমে তাহলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে দক্ষিণের এই রাজ্যে এমনটাই আশঙ্কা কমিশনের।