নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: হায়দরাবাদে ২৭ বছর বয়সী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনেরই ভুয়ো এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছিল। চার অভিযুক্তের মৃত্যু নিশ্চিত করতেই পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালিয়েছিল। দেশের শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া রিপোর্টে এমনটাই জানিয়েছে শিবপুরকার কমিশন। আর কমিশনের রিপোর্টের পরেই ফেক এনকাউন্টারে জড়িদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তেলেঙ্গানা হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা।
গত ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর হায়দরাবাদের শামশাবাদের আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসের নিচে উদ্ধার হয় এক তরুণীর পোড়া দেহ। আগের দিন অর্থাৎ ২৭ নভেম্বর হায়দরাবাদ শামশাবাদে টোল প্লাজার কাছে ২৭ বছর বয়সী পেশায় পশু চিকিৎসক ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। পরে আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসের কাছে দেহটিতে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কল্লুরু গ্রামের একটি পশু-হাসপাতালে কাজ করতেন ওই তরুণী চিকিত্সক। ওই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে প্রথমে গোচিবাওলিতে এক চর্মচিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের স্কুটারটি শামশাবাদ টোল প্লাজার কাছে রেখে ট্যাক্সি নিয়ে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে তিনি দেখা করতে যান। ফিরে এসে দেখেন, স্কুটারের পিছনের চাকাটি পাংচার হয়ে গিয়েছে। তরুণীকে সাহায্যের নাম করে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে মহম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু (২০) নামে চার লরি চালক ও খালাসি। ধর্ষণের পরে আন্ডারপাসের এক কোণে দেহ নামিয়ে তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পালায় তারা। পরের দিন ভোরে এক দুধ-বিক্রেতা সেখানে দেহটি জ্বলতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
গত ৬ ডিসেম্বর সাইদরাবাদের পুলিশ কমিশনার ভি সি সজ্জনার সংবাদ সংস্থাকে জানান, অভিযুক্ত আরিফ, নবীন, শিবা ও চেন্নাকেশাভুলু পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে। ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়ার পথে সাদনগরের চাতানপল্লিতে পুলিশের হেফাজত থেকে পালানোর চেষ্টা করে অভিযুক্তরা। কিন্তু পুলিশের ওই সাফাই বিশ্বাস করেননি মানবাধিকার কর্মীরা। সত্যিই এনকাউন্টারে চার অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভি এস শিরপুরকারের নেতৃত্ব কমিশন গঠন করেছিল শীর্ষ আদালত। ওই কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘হায়দরাবাদে পশু চিকিৎসক তরুণীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ভুয়ো এনকাউন্টার করা হয়েছিল।’ বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য এনকাউন্টারের সঙ্গে জড়িত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।