এই মুহূর্তে




পাকিস্তানে ফের আক্রমণের প্রস্তুতি ভারতের, এবার কীভাবে দেখুন….




নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী আমির মুত্তাকির মধ্যে ফোনে বার্তালাপ হয়েছে সদ্য। বৃহস্পতিবার ঘটা এই ঘটনা পাকিস্তানে অপারেশন সিঁদুরের মতোই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে রাজনৈতিক বার্তালাপ পাকিস্তানকে আরও হতাশ করেছে। পাকিস্তান এমনিতেই ভারতের সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। এর ফলে পাকিস্তান পড়েছে মহা জলসঙ্কটে।

সূত্র মতে, জয়শঙ্কর এবং মুত্তাকি আফগানিস্তানে ভারতীয় সহায়তাপ্রাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলি এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে কাবুল নদীর উপর নির্মিত লালান্ডারের শাহতুত বাঁধ প্রকল্প। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে এই বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু কাবুলে ক্ষমতার পরিবর্তন এতে বাধা সৃষ্টি করে। পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতীয় কূটনৈতিক দলের কাবুল যোগাযোগ আবারও এই প্রকল্প নিয়ে গুঞ্জন তৈরি করেছে।

প্রকৃতপক্ষে, কাবুল নদীর উপর নির্মিত এই প্রকল্পটি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল এবং সেদেশে বসবাসকারী প্রায় ২০ লক্ষ মানুষকে বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করবে। এই মালবেরি বাঁধ প্রকল্পের জন্য ভারত ২৩৬ মিলিয়ন ডলার আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া এই প্রকল্পে আফগানিস্তানের ৪,০০০ হেক্টর জমিতে সেচের সুবিধা প্রদান করা হবে।

শাহতুত বাঁধ প্রকল্প পাকিস্তানের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেবে

তবে কাবুল নদীর ভৌগোলিক অবস্থান এই বাঁধ প্রকল্পে পাকিস্তানের জন্য সমস্যার কারণ। এই নদীটি হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে প্রবেশ করে। এই বাঁধটি নির্মিত হলে, পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বড় এবং সরাসরি সমস্যা তৈরি হবে। এর ফলে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের জলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না পাকিস্তানের পক্ষে। কাবুল নদী সিন্ধু নদের জল অববাহিকার অংশ এবং পাকিস্তানের জন্যও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও আনুষ্ঠানিক জল চুক্তি না থাকায় এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে জঙ্গিদেশের। কারণ শাহতুত বাঁধ প্রকল্পের বিষয়ে আফগানিস্তান পাকিস্তানের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য তো নয়ই, এমনকি কোনও চুক্তিতে আবদ্ধও নয়।

পাকিস্তান কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল

সম্প্রতি, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রকের পাকিস্তান ডেস্কের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব আনন্দ প্রকাশের কাবুল সফরের পর, শাহতুত বাঁধ প্রকল্পে অগ্রগতির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ২২ এপ্রিল পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের দ্বারা পহেলগাঁও হামলা হয়। তার পরই ২৯ এপ্রিল ভারতীয় কূটনীতিকরা কাবুল সফর সারেন। তালেবান সরকার পহেলগাঁও হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ভারতের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আর তা যদি হয় তাহলে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত কি আরও বাড়বে?

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার কুনার নদীর উপর আরেকটি বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা করলে পাকিস্তানের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুনার নদীও হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবুল নদীতে মিলিত হওয়ার আগে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। কাবুল এবং কুনার নদীও সিন্ধু অববাহিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রকল্পটি তালেবান সরকারের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার অংশ, যা অর্থনৈতিক দুর্বলতার সম্মুখীন।

পাকিস্তানের জল নিরাপত্তার জন্য এই নদীগুলি গুরুত্বপূর্ণ

আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান নয়টি নদী অববাহিকা ভাগ করে নেয়, যা পাকিস্তানের জলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাবুল, কুনার এবং সিন্ধু নদী ছাড়াও, এর মধ্যে রয়েছে গোমাল নদী, যা আফগানিস্তানে উৎপন্ন হয়ে পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান এজেন্সিতে প্রবাহিত হয়। এছাড়াও, কুরম নদী, যা পাকিস্তানের কুরম এজেন্সিতে প্রবেশ করে। পিশিন-লোরা, কান্দাহার-কান্দ, কাদানাই, আবদুল ওয়াহাব স্রোত এবং কায়সার নদী রয়েছে, এ সবই বেলুচিস্তানে সিন্ধু অববাহিকার অংশ। পাকিস্তানের জল সরবরাহের ভিত্তি সিন্ধু নদীও দুই দেশ জুড়ে বিস্তৃত। কাবুল এবং কুনারের মতো ভাগ করা নদীতে বাঁধ নির্মাণের আফগানিস্তানের পরিকল্পনা পাকিস্তানের কৃষি এবং জলের প্রাপ্যতার জন্যও সমস্যা ডেকে আনতে পারে। পাককে ঘিরে প্রস্তুতি

তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নিয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার টিটিপিকে আশ্রয় এবং সহায়তা প্রদান করছে। তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। তালেবানদের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে, পাকিস্তান লক্ষ লক্ষ আফগান শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর নীতি গ্রহণ করে। এছাড়াও, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য চেকপয়েন্টগুলিতে আফগান পণ্য আটকে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের এই পদক্ষেপগুলি দুই দেশের মধ্যে ফাটল আরও গভীর করেছে।

আফগানিস্তানের সাথে ভারতের সমন্বয় একটি মাস্টারস্ট্রোক

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা, শাহতুত বাঁধের প্রতি ভারতের সমর্থন এবং আফগানিস্তানের কুনার নদী প্রকল্পের প্রতি ভারতের অন্তর্নিহিত সমর্থন এক দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের অংশ। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে আফগানিস্তানের নদী প্রকল্পগুলির সঙ্গে ভারতের সমন্বয় একটি মাস্টারস্ট্রোক যা পাকিস্তানের জল নির্ভরতার সুযোগ বন্ধ করে দিতে পারে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে পাকিস্তানের জন্য সমস্যার নতুন এক দ্বার উন্মোচিত হতে পারে।




Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ফুটানি! লন্ডনে মোল্লা ইউনূসের জন্য ভাড়া করা হয়েছিল ৭ লাখি হোটেল রুম

ইরানের হামলার ভয়ে আত্মগোপনে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু

‘সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন’, কর্মীদের চিঠি টাটা চেয়ারম্যানের

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জ্বলছে ধুবড়ি, দেখামাত্রই গুলি চালানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানকে অপসারণে ইউনূসকে সমর্থন তারেকের

এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত বোয়িং ড্রিমলাইনার বিমানের নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হবে, এল ডিজিসিএর কড়া নির্দেশ

Advertisement




এক ঝলকে
Advertisement




জেলা ভিত্তিক সংবাদ