নিজস্ব প্রতিনিধি: সাধারণত আমরা যে দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে দেবী দুর্গার পুজো করি, তার থেকে একেবারে ভিন্ন রূপে দেবী দুর্গার পুজো হয় শহর কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে। যেখানের দুর্গার দ্বিভূজা, হাতে নেই কোনও অস্ত্র। এই ধরনের দুর্গাপ্রতিমাকে ‘অভয়া দুর্গা’ বলে। সহজেই দুর্গার এই ভিন্নরূপের দর্শন মেলে উত্তর কলকাতার ভোলানাথ ধাম দত্ত বাড়িতে। এবছর এই পুজো পা দিল ১১৭তম বছরে।
১৯০৫ সালে এই দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন ব্যবসায়ী ভোলানাথ দত্ত। তবে কলকাতায় নয়। দেবীর এইরূপে স্বপ্নাদৃষ্ট হওয়ার পর বারাণসির বাড়িতে প্রথমবার পুজো শুরু করেছিলেন গন্ধ দ্রব্যের ব্যবসায়ী ভোলানাথ দত্ত। তাঁর মৃত্যুর পরও ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সেখানেই পুজোর আয়োজন করা হত। পরে কলকাতার দত্ত পরিবারের আদি বাড়ি শোভাবাজারের গোলক দত্ত লেনে পুজো হয়। ১৯২৫ সালে ভোলানাথ দত্তের মেজ ছেলে ব্রিডন স্ট্রিট অঞ্চলে একটি বাড়ি কেনেন। গোটা পরিবার এই বাড়িতেই ওঠে। ওইহবছর থেকেই এই বাড়ির ঠাকুর দালানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে।
বিডন স্ট্রিটের হেদুয়া মোড় থেকে ছোট স্কটিশ চার্চ স্কুলের দিকে হাঁটলে মিনিট দশেকের পথ। মুকুল বীথি স্কুলের ঠিক পাশের বাড়িতে এসে পৌঁছলেই মনটা জুড়িয়ে যেতে বাধ্য। বনেদিয়ানা আর উত্তর কলকাতার পুরনো বাড়ির অনুভূতি এখানে ভরপুর। রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে পেল্লাই সাইজের ভোলানাথ ধাম দত্ত বাড়ি। কথিত আছে, ভোলানাথ দত্ত চাঁদ সওদাগরের বংশধর।
পরিবারের পুজোয় উমা আসেন শিবের কোলে চেপে। এখানে উমার রূপ শান্ত। হাতে নেই কোনও অস্ত্র। দেখে মনে হবে, মা দুর্গা যেন সপরিবারে বাপের বাড়ি বেড়াতে এসেছেন। শিবকে এখানে জামাইরূপে পুজো করা হয়। প্রতিমার এই রূপদানে এক সম্পূর্ণ পারিবারিক ছবি ফুটে ওঠে।
দত্ত বাড়ির পুজোয় অন্নভোগ দেওয়া হয় না। বরং ভোগে দেওয়া হয় মিষ্টি-ফল, পাঁচরকম ভাজা। অষ্টমী বা নবমীর দিন ধুনো পোড়ানো হয়। বাড়ির মহিলারা এক সঙ্গে বা এক-এক করে ঠাকুরের সামনে বসেন। তাঁদের দুই হাতে এবং মাথায় নতুন গামছা দিয়ে বিড়ে বানিয়ে তার উপর নতুন মালসা বসানো হয়। তার পর সেই মালসায় পোড়ানো হয় ধুনো। সন্তান ও পরিবারের মঙ্গলকামনায় এই অনুষ্ঠান পালন করেন বাড়ির মহিলারা। এ বাড়িতে কুমারী ও সধবা দুই পুজোই হয়। নিরঞ্জনেও রয়েছে বিশেষ নিয়ম। সূর্যাস্তের পর প্রতিমা বাড়ি থেকে বের করা হয়। ওইদিন আবার ঠাকুর বরণ হয়ে যাওয়ার পর উঠোনে প্রতিমা নামিয়ে তার চারদিকে মহিলারা ঘুরে ঘুরে অঞ্জলি দেন। এই প্রথাকে বলা হয় ‘বেড়া অঞ্জলি’। তবে করোনার জন্য গতবছর থেকেই এই পুজোর জৌলুস অনেকটা কমে গিয়েছে।