নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বাংলাদেশের প্রাচীন ভিটে গিলেছে পদ্মা। জলপাইগুড়ির উকিলপাড়ার নিয়োগী পরিবারের ওপার বাংলার স্মৃতি বলতে সম্বল শুধু দুর্গাপুজো। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই পুজোর জায়গা বদল হয়েছে বার বার। কিন্তু রীতি-রেওয়াজে এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। প্রতিবার প্রতিপদ থেকে মায়ের পুজো শুরু হয়। তবে এবার মল মাস থাকায় পঞ্চমী থেকে পুজো শুরু হবে। আজও নিয়োগী বাড়ির পুজোর প্রধান আকর্ষণ ‘শত্রুবলি’।
নিয়োগী পরিবারের সদস্যরা জানান, এবার ২১২ বছরে পা দিল এই পুজো। ১৮০৮ সালে বাংলাদেশের ঢাকার পাটগ্রামে নিয়োগী পরিবারের দুর্গাপুজো শুরু হয়। ১৯৫২ সালে কলকাতার ভবানীপুরের প্রিয়নাথ মল্লিক লেনের বাড়িতে স্থানান্তরিত হয় এই পুজো। তবে পারিবারিক কারণে ১৯৬৭ সালে সেই পুজো চলে আসে জলপাইগুড়িতে। সেই সময় এই পুজোর জাঁকজমক ছিল চোখে পড়ার মতো। পুজোর চারটে দিন বাড়ির দালানে পাত পেড়ে চলত খাওয়া-দাওয়া। দিনগুলি কাটত কোলাহল-হুল্লোড়ে। বসত থিয়েটার, সাহিত্যের আসরও। বের হতো দেওয়াল পত্রিকা। বর্তমানে নবমীর দিন পারিবারিক পত্রিকা ‘জ্যোতি’ বের করা হয়।
আর পাঁচটা বনেদি বাড়ির থেকে নিয়োগী বাড়ির পুজোর নিময় অনেকটাই আলাদা ৷ পরিবারের এক সদস্য শ্রীমন্তী নিয়োগী জানান, প্রথা মেনে পঞ্চমীতে এখানে মনসার পুজো হয়। গণেশ নয়, কার্তিকের পাশে অধিষ্ঠান করেন কলাবউ। গণেশের পাশে থাকেন সরস্বতী, লক্ষ্মী থাকেন কার্তিকের পাশে। সপ্তমী এবং অষ্টমীর সন্ধি মুহূর্তে হয় কালীপুজো। পরিবারের অন্য এক সদস্য নবনীতা নিয়োগী জানান, এখনও বাড়ির পুজোর মূল আকর্ষণ নবমীর শত্রুবলি। কলাগাছের থোড় এক হাত মাপের মতো কেটে নিয়ে চালের গুড়ো দিয়ে মানুষের মুখের অবয়ব বানানো হয়। আর তার একগালে মাখানো হয় কালি। অন্যগালে চুন-হলুদ দিয়ে রক্তের রং দেওয়া হয়। নিয়ম মেনেই হয় বলি। তারপর থোড়রূপী ওই শত্রুকে দুই খণ্ড করে বাড়ির বাইরে ছুঁড়ে ফেলা হয়।
আগে কলকাতা থেকে মৃৎশিল্পীরা জলপাইগুড়ি এসে প্রতিমা গড়তেন৷ এখন স্থানীয় শিল্পীরাই প্রতিমা গড়ে তোলেন। পুজোর ভোগ হিসেবে অন্ন ভোগ, হাতে তৈরি নাড়ু, মিষ্টি ও মোয়া দেওয়া হয়। পরিবারের অনেক সদস্যই বাইরে থাকেন। করোনার কারণে এবছরও তাঁরা আসতে পারবেন না। পরিবারের আর এক সদস্য রুবি নিয়োগী জানান, একসময় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও ভিড় হত এই পুজো ঘিরে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে এবছর প্রতিমার উচ্চতাও কমানো হয়েছে। যাতে ভিড় এড়ানো যায়, তার জন্য পুজো দেখানো হবে সোশ্যাল মিডিয়ায়।