নিজস্ব প্রতিনিধি: পটুয়াপাড়ায় দুর্গা প্রতিমায় তুলির শেষ টান এখনও পড়েনি, তার মধ্যেই বুধবার খাস কলকাতার একটি বাড়িতে বোধন হয়ে গেল দেবী দুর্গার। আগামী ১৮ দিন ধরে চলবে এই বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজো। ট্যাংরার শীল লেনের দাস পরিবারের পুজোর রীতি এটাই। মোট তিন ধাপে হয় পুজো। দাস বাড়ির আরাধ্য দেবতা রাধা-কৃষ্ণের পাশেই দুর্গাপুজোর আয়োজন। কলকাতার দুই প্রতিষ্ঠিত ভাই-বোন এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন ১১ বছর আগে। কিন্তু এই অল্প সময়েই এই পুজো কলকাতার অন্যতম পারিবারিক পুজোর মর্যাদা পেয়েছে। কারণ চিরাচরিত রীতি ভেঙেও সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রাচীন পদ্ধতি মেনেই পুজো হয় ট্যাংরার দাস বাড়িতে। নিজের হাতেই পুজো করেন বাড়ির অন্যতম সদস্য ৩৮ বছরের ইঞ্জিনিয়ার প্রসেনজিৎ দাস।
কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথির আদ্রা নক্ষত্র মেনে শুরু হওয়া এই পুজো অবশ্য পুরনো নয়। চলতি বছরে মাত্র ১২ বছরে পরল পুজোর বয়স। বুধবার কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে পুজো শুরু হলেও তা চলবে আগামী দশমী পর্যন্ত। মহালয়া পর্যন্ত হবে নিত্যপুজো। এরপর একাদশী থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত হবে বিশেষ পুজো। আর সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত রীতি মেনে হবে মহাপুজো। দশমীতেই প্রতিমা নিরঞ্জন। এই পরিবার বর্তমানে আনন্দ পালিত রোডে থাকেন। কিন্তু পুজো হয় তাঁদের আদি বাড়ি ট্যাংরার শীল লেনেই। সেখানেই তাঁদের আরাধ্য রাধামাধমের মন্দির রয়েছে। বুধবারই দাস বাড়িতে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবে গমগম করতে শুরু করেছে। ফলে প্রকৃত অর্থেই কলকাতায় দুর্গাপুজোয় প্রথম ঢাকে কাঠি পড়ল ট্যাংরার দাস বাড়ি থেকে।
১১ বছর আগে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়র প্রসেনজিৎ দাস এবং তাঁর চিকিৎসক দিদি মৌমিতা দাস। প্রথম প্রথম পূজারী হিসেবে যোগ দিতেন মৌমিতা দাস। কিন্তু বিয়ের পর তিনি আর পূজারীর আসনে বসেন না। এখন প্রসেনজিৎবাবুই পুজো করেন। তিনি জানালেন, ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতিকে ধরে রাখাই আমাদের পুজোর মূল উদ্দেশ্য। দুর্গা একদিনের নন, প্রতিদিনের পূজ্য। এই বাড়ির পুজো সম্পন্ন হয় বিভিন্ন প্রাচীন পদ্ধতি মেনে। কখনও রঘুনন্দনের ‘দুর্গোৎসব তত্ত্বের’ উপর ভিত্তি করে আবার কখনও বিদ্যাপতির লেখা ‘দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী’পুস্তকে লেখা নিয়ম মেনে। আবার কখনও শূলপাণির লেখা ‘দুর্গোৎসব বিবেক’ অনুযায়ী৷ প্রসেনজিৎবাবু জানালেন, শূলপাণির লেখা ‘দুর্গোৎসব বিবেক’ রঘুনন্দন বা বিদ্যাপতির চেয়েও প্রাচীন বই৷
১৮ দিন ধরেই বা পুজো কেন? যেখানে সব পুজো যখন শুক্লা ষষ্ঠীতে শুরু হয় তখন এখানে কৃষ্ণা নবমী থেকে শুরু হয় পুজো? উত্তর দিলেন দাস বাড়ির পুজোর অন্যতম প্রবর্তক অন্যতম প্রসেনজিৎ দাস। তিনি জানান, বৃহৎ নন্দীকেশ্বর পুরাণ অনুসারে শূলপাণির দুর্গোৎসব-বিবেক গ্রন্থ মতে পুজো হওয়া উচিত কৃষ্ণা নবমী থেকে শুক্লা নবমী পর্যন্ত। সেই রীতি মেনেই আমরা পুজো করি। অন্যত্র পুজো হয় রঘুনন্দন তত্ত্ব অনুসারে।