-273ºc,
Friday, 2nd June, 2023 8:14 pm
নিজস্ব প্রতিনিধি: বাতাসে পুজোর আমেজ, শহরের এখানে ওখানে পুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। পাশাপাশি গ্রামেও চলছে বারোয়ারি পুজোর প্রস্তুতি। বাংলার বুকে প্রচুর বারোয়ারি পুজোর আছে। আজকে জানাবো এই বারোয়ারি পুজো কী ভাবে শুরু হল। হুগলি জেলার একটি পরিচিত গ্রামের নাম গুপ্তিপাড়া। সঙ্গে এই গ্রামেআ রয়েছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মন্দিররীতির একাধিক নিদর্শন। যাকে কিনা বাংলার ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্রও বলা চলে। সতেরোশো ও আঠারোশো শতকে গড়ে ওঠা চারটি বৈষ্ণব মন্দির রয়েছে এখানে। চারটি মন্দিরের মধ্যে বৃন্দাবনচন্দ্র ও কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির দুটি আটচালা রীতিতে তৈরি। রামচন্দ্র মন্দিরটির গায়ে টেরাকোটার কাজ আজও ইতিহাস মনে করায়। আর এই চত্বরের সবচেয়ে পুরোনো মন্দিরটি হল চৈতন্যদেব মন্দির।
এভাবেই পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে রয়েছে সব মন্দিরগুলি। ষোলো শতকের মধ্যভাগে রাজা বিশ্বেশ্বর রায় তৈরি করেছিলেন চৈতন্য মন্দিরটি। তিনি ছিলেন সম্রাট আকবরের রাজস্ব বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মচারী। শ্রীচৈতন্যদেবের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত এই মন্দিরে বহু সংস্কার রয়েছে। এক কালে বাংলার প্রাচীনতম টেরাকোটা কাজ ছিল এই মন্দিরের গায়ে। কিন্তু বর্তমানে সে সবই বিলীন হয়েছে। খর্বাকৃতি পিলার ও তার ওপর কারুকার্য করা
বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল ১৮১০ সালে। এর উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট, এটিই প্রাঙ্গণের সবচেয়ে বৃহৎ মন্দির। বাংলা মন্দির রীতির আটচালা ধারায় তৈরি এই স্থাপত্যটির গায়ে টেরাকোটার কাজ খুব বেশি নেই। এই মন্দিরে আছে রাধা, কৃষ্ণ, জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও গরুরের বিগ্রহ। এই মন্দিরের ডান পাশে রামচন্দ্র ও বাম পাশে কৃষ্ণচন্দ্রের মন্দির। পুরাকালে গুপ্তিপাড়া ছিল দেশের শিল্প সংস্কৃতি চর্চার এক অন্যতম কেন্দ্র। এমনকি বাংলা কবিগানের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র ভোলা ময়রা জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই গুপ্তিপাড়ায়।
১৭৬০ সালের গুপ্তিপাড়ায় দুর্গাপূজা হত সেনবাড়িতে। কিন্তু এক সময় কিছু মানুষ সেনবাড়ির দুর্গাপুজোয় অংশগ্রহণ না করে বারোজন মিলে একটি কমিটি গঠন করলেন। তাঁদের আয়োজনেই প্রথম স্থানীয় বিন্ধ্যবাসিনী মাতার মন্দিরে অনুষ্ঠিত হলো সর্বজনীন শারদোৎসব। বারোজন বন্ধুর উদ্যোগে যেহেতু এই পুজো শুরু হয়, তাই তখন থেকেই এই পুজোর নামকরণ হয় বারোয়ারি। যে মায়ের আরাধনা শুধু মুষ্টিমেয় অর্থবান ব্যক্তিরা করতেন, তখন থেকেই মায়ের পুজো ছড়িয়ে পড়ল বাংলার পাড়ায় পাড়ায়। সুতরাং বলাই যায়, বারোয়ারি পুজোর আঁতুড়ঘর গুপ্তিপাড়া। তবে এখানকার প্রধান উৎসব রথযাত্রা।