নিজস্ব প্রতিনিধি: একমঞ্চে নরেন্দ্র মোদি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধি, মনমোহন সিং, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ একাধিক রাজনীতিবিদ। তবে কোনও রাজনৈতিক মঞ্চে নয়। তাঁদের মিলিয়ে দিতে চলেছে বাংলার শারদোৎসব। কলকাতার ইস্ট বেলেঘাটা জনকল্যাণ সঙ্ঘে দেখা যাবে তাঁদের। তবে সশরীরে নয়। এবছর এই পুজো কমিটির থিম ‘কাঠের পুতুলের জীবন’। সেই থিমেই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে রাজনীতিবিদদের।
পূর্ব বর্ধমানের অগ্রদ্বীপ স্টেশনে নেমে কিছুটা গিয়ে পড়ে নতুনগ্রাম। এই নতুনগ্রামে কাঠের তৈরি রঙ-বেরঙের পুতুল জগৎবিখ্যাত। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও এসেছে এই গ্রামে। কাঠের পুতুল বানিয়েই সংসার চলে এই গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবারের। কিন্তু করোনা আর লকডাউনের জোড়া-ফলায় বিধ্বস্ত্ব তাঁদেরও জনজীবন। এই দু’বছরে কোথাও বসেনি কোনও মেলা। ট্রেন বন্ধ, তাই বন্ধ ফেরিও। চরম আর্থিক অনটনে গ্রামের প্রতিটি পরিবার। সেই খোঁজ পাওয়ামাত্র মানবিক উদ্যোগ নিল ইস্ট বেলেঘাটা জবকল্যাণ সঙ্ঘ। এবছর সেই সমস্ত পরিবার থেকে তৈরি সমস্ত কাঠের পুতুল কিনে নিচ্ছে পুজো কমিটি। শুধু তাই নয়, সেখানকার শিল্পীদের নিয়ে এসে চলছে মণ্ডপসজ্জার কাজও। থিমের মধ্যেই নতুনগ্রামের জনজীবনকে ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পী সমর সাহা। প্রতিমা তৈরি করছেন সুশান্ত দাস।
শিল্পী জানিয়েছেন, থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজনীতিবিদদের পুতুলের মূর্তি বানিয়ে সাজানো হবে মণ্ডপে। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তি বসানো হবে একটি মঞ্চে। যেখানে তাঁর মূর্তির সঙ্গে থাকবে রাজ্য সরকারির জনমুখী প্রকল্পগুলি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থাকবেন একটি মঞ্চে, তার সামনে থাকবে পেট্রোল পাম্প ও রান্নার গ্যাস। যা দেখলে বুঝতে অসুবিধা হবে না, এই দুই রাজনীতিবিদের আমলে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কীভাবে আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। এক মঞ্চে থাকবে সনিয়া গান্ধি ও রাহুল গান্ধির মূর্তি। তাদের মূর্তি গড়া হচ্ছে বক্তৃতা দেওয়ার আদলে। আবার রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে থাকবে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মূর্তিও। সেই মঞ্চের সামনে রাখা থাকবে বইয়ের সারি।
শিল্পী সমর সাহার কথায়, ‘লকডাউনে আয় একেবারে তলানিতে চলে যাওয়া শিল্পীদের হাতে কাজ ফিরিয়ে দিতেই আমরা এই থিম বেছে নিয়েছি। তাঁদের সবরকম স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের মূর্তি দিয়ে মণ্ডপ কী ভাবে সাজানো হবে, তাও তাঁরা নিজেরাই পরিকল্পনা করেছেন।’ তবে শুধু রোজগারের বড় পথ খুলে দেওয়াই নয়, পুজো কমিটির সম্পাদক সুখদেব দাস জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে পাওয়া ৫০ হাজার টাকার অনুদানও নতুনগ্রামের ৫০টি পরিবারের জন্য খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই পুজো কমিটি। তবে শুধু পুজোর সময়েই নয়, সারাবছর ধরেই পুজো কমিটির সদস্যরা মানুষের পাশে থাকে। সারাবছর ধরেই বৃক্ষরোপণ। কোভিড পরিস্থিতিতে দুঃস্থ মানুষের কাছেও খাবার পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, রক্তদান শিবির থেকে শুরু করে বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পরীক্ষাও করা হয়েছে।