নিজস্ব প্রতিনিধি: এ যেন এক অন্য পুজো। যে পুজোর কাহিনী শুনলে আপনিও লজ্জা পাবেন। আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আমরা যে জাতপাতের বন্ধন থেকে মুক্তি পাইনি সেটা এই পুজো দেখতে এলে আপনিও বুঝবেন। এখানে জাতপাতের জালে বন্দি মা দুর্গাও। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মালদা জেলার রতুয়া রামপুর হাট এলাকার হরিজন পাড়ার দুর্গাপুজোয় প্রতিমা তৈরি করেন না পটুয়া শিল্পীরা। এমনকি পুজো করেন না কোনও ব্রাহ্মণ পুরোহিত। কারণ এই পুজোর প্রচলন এবং পুজো অনুষ্ঠিত করেন হরিজন সমাজ।
রতুয়ার হরিজন পাড়ায় প্রায় ৫০ বছর আগে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন রাধিকা হরিজন। কিন্তু দুর্গাপ্রতিমা তৈরির শিল্পী থেকে শুরু করে পুজো করার ব্রাহ্মণ পর্যন্ত পাননি তিনি। অগত্যা তিনি নিজেই দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করে নিজেই পুরোহিত হিসেবে পুজো শুরু করেছিলেন। আজও সেই পুজো অব্যাহত রয়েছে। মারা গিয়েছেন রাধিকা হরিজন, কিন্তু তাঁর শুরু করা পুজো আজও হয়ে আসছে একই রীতিতে। কারণ আজও এই পুজোয় অংশ নেয় না কোনও ব্রাহ্মণ পুরোহিত। দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেন না কোন কারিগর, কেননা এই পুজো হয় হরিজনদের উদ্যোগে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও জাতপাত নিয়ে এই কুসংস্কার সত্যিই নজিরবিহীন।
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। এই উৎসবে মেতে ওঠেন আট থেকে আশির আমজনতা। রাজ্য়ের বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি বা সর্বজনীন পুজো গুলিতে এ ধরণের জাতপাতের ভিত্তিতে বিভাজনের কথা শোনা যায় না। কিন্তু মালদা জেলার রতুয়ায় এই পুজো যেন সত্য়িই ব্যতিক্রম। হরিজন সমাজের এই দুর্গাপুজো তাঁদের জীবনযাত্রার মতই বঞ্চিত। আসলে মা দুর্গাই এখানে বঞ্চিত। কারণ, হরিজন সমাজ অন্য়ান্যদের মতো নতুন জামা কাপড় পড়ে পুজোতে সামিল হন, কিন্তু তাঁদের পুজো দেখতে সাধারণ মানুষ আসেন না। বিগত ৫০ বছর ধরে হরিজনপাড়ার টিনের চালের ঘরে মা দুর্গার অধিষ্ঠান করা হয়। ধুমধামের সঙ্গেই হরিজন সমাজ পুজো করেন আন্তরিকতার সঙ্গে। কিন্তু তাঁদের আক্ষেপ একটাই, আজও কি তাঁরা বঞ্চিত থাকবেন? এই প্রশ্ন আজকের যুগে সত্য়িই লজ্জার।