নিজস্ব প্রতিনিধিঃ অভিনয় জগতে তাঁর আসা ২০০৮ সাল নাগাদ। দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রাগল করেছেন প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য। বিষয়টা সময়সাপেক্ষ হলেও নিজের পরিচয় তিনি তৈরি করেছেন নিজের দক্ষতায়। অভিনেতা রোহন ভট্টাচার্য। এই জার্নিতে তাঁর পাশে ছিলেন তাঁর মা,বাবা ও যার কথা না বললেই নয় তিনি হলেন রোহনের বান্ধবী সৃজলা। এখন ভীষণ ব্যাস্ততম শিডিউল দুজনেরই। তাঁর মাঝেই পুজোর প্ল্যানিং সারছেন তাঁরা। তাতে মিশে রয়েছে আনন্দ, ছুটির মজা, আবেগ, স্মৃতি। এহেন পুজো প্ল্যান এই মুহূর্তের প্রতিনিধি অরণী ভট্টাচার্যের সঙ্গে শুটিংয়ের ব্যাস্ততার ফাঁকে শেয়ার করলেন অভিনেতা রোহন ভট্টাচার্য।
পুজোর কী প্ল্যান?
শুটিংয়ের মারাত্বক চাপ। ব্যাঙ্কিংয়ের চাপ তো রয়েছেই। আশা করা যাচ্ছে ষষ্ঠী অবধি শুটিং চলবে। তবে তার মাঝেই একটুকরো খুশির আমেজ পুজো আসছে। ছুটিতে বাড়ির সকলের সঙ্গেই কাটাবেন রোহন। জানালেন, সেভাবে এখনও পর্যন্ত কোনও প্ল্যান নেই তাঁর। প্ল্যান একটাই আপাতত, সেটা হল পরিবারের সকলের সঙ্গে সময় কাটানো। যেহেতু সারা বছর খুব ব্যাস্ততা থাকে। পরিবারের কাউকে সেভাবে সময়ও দিতে পারেন না তাই এমনই ভেবেছেন তিনি। তবে কিছু জায়গায় পুজো উদ্বোধন ও বেশ কয়েকটি পুজোয় অতিথি হিসাবে যাওয়ার বিষয়টি থাকছেই। সেইসব সেরে পরিবারের সকলকে সময় দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে বলেই জানা অভিনেতা।
পাড়ার পুজো নিয়েও বেশ নস্টালজিক রোহন। জানান, ভজগোবিন্দ সিরিয়ালের সময় থেকেই আর সেভাবে পাড়ার পুজোয় থাকতে পারেন না। তবে একটা দিন অবশ্যই পাড়ার পুজোয় থাকেন তবে সেই অর্থে দায়িত্ব কিছু থাকে না তাঁর ওপর। পুজোর একদিন পাড়ার মন্ডপে যতটা সম্ভব থাকার চেষ্টা করেন। সকলের সঙ্গে কথা হয়। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে।
পুজো মানেই বাঙালির শপিংয়ের লম্বা একটা লিস্ট থাকে। অভিনেতা রোহনের শপিং কতদূর?
রোহন জানান, সেই অর্থে শপিং আমি করি না। সৃজলাই করে। এবং শপিং পুরোটাই অনলাইনে হচ্ছে। কারণ এবছর ও নিজেও খুব ব্যাস্ত। তবে আমি আমার জন্য কিছু কিনি না। প্রচুর গিফট পাই। সবাইকে পুজোর উপহার দেওয়ার একটা ব্যাপার তো থাকেই। মা, সৃজলা ও আমার ভাগ্নাদেরকে পুজোর গিফট দেব। ইতিমধ্যেই মাকে শাড়ি কিনে দিয়েছি। বাকিদের কেনাকাটাও সারব ধীরে ধীরে।
পুজোয় ভুরিভোজের কি প্ল্যান রোহনের?
আমি খেতে ভীষণ ভালোবাসি। আমার মন খারাপ থাকলে মুড চাঙ্গা করার একমাত্র উপায় খাওয়া-দাওয়া। তাই যেদিন মন খারাপ নিয়ে শুটিং সেরে বাড়ি ফিরি সেদিন মনভরে খাই। খেলেই আমার সমস্ত মনখারাপ দূরে চলে যায়। আমি আমেরিকান বার্গার খেতে খুব ভালোবাসি। সপ্তাহে প্রায় তিন-চার দিন বার্গার খাই। ভজগোবিন্দ সিরিয়াল যখন করছিলাম তখন শুটিংয়ের খুব চাপ থাকত। তখন সারাদিন শুটিংয়ের ফাঁকে খুব খেতাম। মাঝে তাই ওজনও বেড়েছিল। এখন সেইদিকটা নজর রেখে খাই। কিন্তু খাওয়াদাওয়া চলতেই থাকে। পুজোতেও তার অন্যথা হবে না। মা ভীষণ ভালো রাঁধেন। মাকে এখন থেকেই বলে রেখেছি চিংড়ি ভাপা বানাতে। এছাড়াও মা দারুণ বিরিয়ানিও বানান সেটাও পুজোতে খাব।
সৃজলাও দারুণ রান্না করে। ও মাঝে মাঝেই সময় পেলে আমাকে অনেক কিছু বানিয়ে খাওয়ায়। তবে এত কাজের চাপ তার মধ্যে থেকে একটু ছুটি পাবে তাই আমি চাইনা ও পুজোতে রান্না করুক। আমরা বাইরে বেরবো। সময় কাটাব। বাইরে খাওয়াদাওয়া করার ইচ্ছা আছে। সৃজলার মা বাবা কলকাতার বাইরে থাকেন। ওনারাও পুজোতে কলকাতায় আসছেন। আমার পরিবারের সকলেও থাকবেন। তাই একটা বড়সড় ফ্যামিলি গ্যাদারিং হবে। সবাই একসাথে সময় কাটাব।
পুজোতে সবচেয়ে কোন বিষয়টা মিস করেন রোহন?
অনেক কিছুই মিস করি তবে এবছর থেকে পুজোয় বাপিকে আর কাছে পাব না। এটাই সবথেকে কষ্টের বিষয় আমার কাছে। তবে আরও যা মিস করি সেটা হল পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে ঠাকুর দেখতে যাওয়া। তখন বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় পুজোর সময় চলে যেতাম। পকেটে হয়তো ২০-৫০ টাকা থাকত। সেই দিয়েই সবাই ভাগ করে খাওয়া-দাওয়া করতাম। এমনও হয়েছে টাকা শেষ। সারা রাস্তা হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরেছি। সেই পুজোর দিনগুলো মনে পড়লে মনে হয় তখন কতকিছু ছিল না কিন্তু তাও আনন্দে এতটুকু ঘাটতি হয়নি।
রোহনের অষ্টমীর অঞ্জলির সঙ্গে তার বাপি কতটা মিশে আছেন?
বাপিকে রোজই মিস করি তবে পুজো এলে তিনি আরও বেশি মনে পড়বেন। কারণ, বাপিকে ছাড়া পুজো আর অষ্টমীর অঞ্জলি আমি ভাবতেই পারিনা। মাস কয়েক আগেই তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। বাপি দমদম বেদিয়াপাড়ার দুর্গাপুজোয় পৌরহিত্য করতেন। আমাদের কয়েক পুরুষ এই পুজোর পৌরহিত্য করছেন। সেখানেই আমার প্রতি বছর অঞ্জলি দেওয়া। অন্য আর কোথাও আমি অঞ্জলি দিতে পাড়ি না। একবার আমি নর্থ বেঙ্গলে ছিলাম। সেই বছরও অঞ্জলি দিতে পারিনি। বাপি ছাড়া আর কারও মন্ত্রোচ্চারণ আমি বুঝতেও পাড়ি না। তাই এবছর থেকে বাপিও নেই আর আমিও আর কোনদিন হয়তো অঞ্জলি দেবনা।