নিজস্ব প্রতিনিধি: একেই তো করোনা অতিমারীর আতঙ্ক, এর উপর ধোঁয়া-দূষণের জ্বালায় প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থা কলকাতাবাসীর। তাই উইকএন্ড ট্য়ুরে একটু জঙ্গলে ঘুরতে গেলে কেমন হয়? বর্তমানে অনেকেই বাইক বা গাড়ি নিয়ে এদিক-ওদিক বেরিয়ে পড়ছেন। নিও নর্মালে কলকাতার কাছেপিঠেই কোনও জানা-অজানা গন্তব্য়ে একটা দিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। তাঁদের জন্য় রইল এক টুকরো আনন্দে ভরা একটা ছোট্ট ট্যুরের তথ্য়-তালাশ।
কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে উইকএন্ডে একটু প্রকৃতির সান্নিধ্য়ে যেতে চাইছেন? চলুন ঘুরে আসি ভালকি মাচানে স্থানীয়রা একে ভাল্কি মাচানও বলেন। যেখানে আছে ঘন জঙ্গল, শাল, পিয়াল, সেগুনের ছায়ায় প্রেমের হাতছানি। সেখানে নেই ধোঁয়া-দূষণ, শব্দ দানবের হুঙ্কার। সেখানে আছে শুধু পাথিদের কোলাহল আর শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি আর কিছুটা ইতিহাসের হাতছানি।
ভালকি মাচান, কলকাতা থেকে মাত্র ১৫৫-১৬০ কিমি দূরে এই ভালকি মাচান জঙ্গল। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের কাছেই ভালকি মাচান। এই মাচানের মধ্যেই জলাশয়। তাতে বোটিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। এটি পিকনিক করার আদর্শ জায়গা। তবে গভীর অরণ্য়ের মধ্য়ে সুন্দরী ভালকি মাচানে একটা-দুটো দিন কাটিয়ে আসতেই পুারেন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে।
এই জঙ্গলের মধ্য়ে রয়েছে কয়েকটি ভগ্নপ্রায় নজর মিনার বা মাচান। যা বর্ধমানের ভাল্কি রাজারা তৈরি করিয়েছিলেন। তাঁদের নামেই এলাকার নাম হয়েছে ভালকি মাচান। লাল মাটির রাস্তা জঙ্গলের পেট চিরে চলে গিয়েছে। মাঝে-মধ্য়ে একটি-দুটি গ্রাম। গ্রামের মানুষও হাতে গোনা। শব্দ বলতে পাখির কলতান আর মাধে মধ্য়ে ইঞ্জিন ভ্য়ানের আওয়াজ। জনশ্রুতি, বর্গী আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং শিকারের জন্য় এই এলাকায় ভল্লুপদ রাজারা বানিয়েছিলেন সুউচ্চ কয়েকটি টাওয়ার, যাকে স্থানীয়রা বলেন মাচান। ইটের তৈরি এই মাচানগুলির কয়েকটি আজ ভগ্নপ্রায়। মূলত বর্গীদের গতিবিধির উপর নজর রাখতেই মাচান ব্য়বহার হত। আবার রাজপরিবারের সদস্য়রা এই মাচানে আসতেন শিকারের আশায়। উপরে বন্দুক হাতে শিকারের জন্য অপেক্ষা করতেন রাজা। আর নীচে পাতা থাকত ফাঁদ। সেই ফাঁদে আটকে রাখা হত ছাগল বা অন্য কোনও প্রাণী। তখন ছিল অতি ঘন জঙ্গল, আজ তার অনেকটাই নেই, কমেছে জঙ্গলের ঘনত্ব। তবুও সবুজের অভাব নেই ভালকি মাচানে।
পর্যটকদের কাছে এই মাচানের আকর্যণ কিন্তু কোনও অংশে কমেনি। আর এই মাচানের ঠিক নীচেই রয়েছে একটি সুরঙ্গ। জনশ্রুতি, এটিই নাকি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়ের দুর্গেশনন্দিনীর সেই বিখ্য়াত সুরঙ্গ। তবে এখন বিপদ এড়াতে সেটি লোহার জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। পর্যটকদের কাছে আরও একটি আকর্ষণের বস্তু হল ভালকি মাচানের জলাশয়টি। সবুজ বনাণীর মধ্যে শাল, পিয়াল, সেগুন, দেবদারু, মহুয়া, সোনঝুরি ও হরতকী গাছের জঙ্গল। এরমধ্য়েই বিশাল জলাশয়। এই জলাশয়ে বোটিং করা যায়। জলাশয় ও জঙ্গলে আসে প্রচুর পাখি। ফলে অবসর সময় কাটানোর জন্য খাসা ব্য়বস্থা। এখানে থাকার জন্য একটিই জায়গা আছে। সেখানে থাকলে আপনি জঙ্গলকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন। ওই অতিথি নিবাস থেকে কিছুটা এগোলেই পাবেন ভল্লু রাজাদের দুর্গ।
কীভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন?
হাওড়া থেকে বর্ধমানগামী লোকাল ধরে নেমে পড়ুন পরাজ স্টেশনে। এখান থেকে ভালকি মাচান মাত্র ১৬ কিমি দূরে। এছাড়া গুসকরা বা মানকর স্টেশনে নেমেও যাওয়া যায় ভালকি মাচান। এছাড়া নিজেদের গাড়ি নিয়ে আসলে দুর্গাপুর ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বুদবুদ, মানকর, অভিরামপুর হয়ে পৌঁছে যান ভালকি মাচান। এই রাস্তাও বেশ মনোরম।
ভালকি মাচানে থাকার জন্য রয়েছে একটিই অতিথি নিবাস। যা আউসগ্রাম ২ গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি দ্বারা পরিচালিত। থাকা সহ খাওয়া-দাওয়ার ব্য়বস্থা আছে এখানে। নাম অরণ্য়সুন্দরী। পাকা রাস্তা থেকে সামান্য় লাল মাটির রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলেই পেয়ে যাবেন অরণ্য়সুন্দরী, ছোট্ট দোতলা অতিথি নিবাস।