নিজস্ব প্রতিনিধি: সুকান্ত মজুমদার। বঙ্গ বিজেপির সভাপতি। দলের দায়িত্ব নিয়েছেন ৬ মাসও হয়নি। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কার্যত হারের হ্যাট্রিক গড়ে দিলেন। শুধু হ্যাট্রিক গড়ে দেওয়াই নয়, দলকে কার্যত এক দশক পিছিয়েও দিয়েছেন তিনি। দিলীপ ঘোষের সময়টুকু বাদ দিয়ে বাংলার বুকে বিজেপির যে অবস্থান চিরাচরিত ভাবে থেকে এসেছে ঠিক সেই জায়গায় এদিন দলকে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন সুকান্ত মজুমদার। এক দশক আগে ২০১০ সালে কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল মাত্র ৩টি আসন। এবারেও কলকাতার পুরনিগমের নির্বাচনে বিজেপির আসন প্রাপ্তির সংখ্যা ৩। সেই হিসাবে বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান ও পতনের একটি অধ্যায় পূর্ণ হল এদিন, আর সেটাও সুকান্তের হাত ধরে।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হারের জেরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলায় দলের ব্যাটন দিলীপ ঘোষের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তা তুলে দিয়েছে সুকান্ত মজুমদারের হাতে। গত সেপ্টেম্বর মাসে দলের দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন সুকান্ত। সেই হিসাবে ৬ মাসও পূর্ণ হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে বিজেপি ৩টি নির্বাচনে হেরেছে গোহারান ভাবে। শুধু হেরেছে বলাও ভুল, বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে ক্রমশ পিছোতে শুরু করেছে বিজেপি। এমনকি এখন তো বামেরাও বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যে কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচন ছিল তৃতীয় নির্বাচন। কেননা মাঝে দুই দফায় রাজ্যে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচন কালে দিলীপ ছিলেন বঙ্গ বিজেপির মাথা। তাঁর আমলেই কিন্তু বঙ্গ রাজনীতিতে বিজেপির উত্থান ঘটে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন প্রাপ্তি ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭টি আসন প্রাপ্তি। ইতিহাস দেখলে কিন্তু দেখা যাবে এই দুই নির্বাচনী ফলাফলই বিজেপি সেরা প্রাপ্তি এখনও পর্যন্ত। কিন্তু সুকান্তের আমলে সেই ছবিটাই পালটে গিয়েছে। লজ্জার হার ঘটেছে চলেছে দলের, আর সেটাও একের পর এক নির্বাচনে।
এদিন কার্যত শুকনো মুখে বিরস বদনে সুকান্ত আসেন দলের সাংবাদিক সম্মেলনে। নিজের মতো করে দলের হারের ব্যাখাও দেন। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে এটাই যে এবার সুকান্তকে নিয়েই দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। লজ্জার মাথা খেয়ে যেভাবে তিনি দলের হারের জন্য শাসক শিবিরের সন্ত্রাসকে হাতিয়ার করেছেন নিজেকে বাঁচাবার জন্য তা নিয়ে দলের অন্দরেও ক্ষোভ জেগেছে। বিশেষ করে বিজেপিকে পিছনে ফেলে বামেরা যেভাবে ভোট প্রাপ্তির হিসাবে এগিয়ে গিয়েছে তা দলকে সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। অস্বস্তি ছড়িয়েছে বামেদের অপেক্ষা বিজেপি কম ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে থাকায়। এখন বঙ্গ বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন সুকান্ত বঙ্গ বিজেপির সভাপতি হওয়ার যোগ্যই নয়। দিলীপ ঘোষের মধ্যে যে লড়াকু ভাবমূর্তি ছিল তার ছিঁটেফোঁটাও সুকান্তের মধ্যে নেই। প্রায় ৪ মাস হতে চলল তিনি দলের দায়িত্ব নিয়েছেন অথচ এর মধ্যে তিনি এখনও দলের বেশ কিছু কমিটির গঠন করে উঠতেই পারেননি। দলের অন্দরে যে ক্ষোভ বিক্ষোভ রয়েছে তারও কোনও সমাধান করতে পারেননি। প্রতিদিন দল ছাড়ছেন নেতা থেকে কর্মী, তিনি তা ঠেকাতেও পারেননি। দলকে কঠিন সময়ে দিশা দেখাতেও পারেননি। দিলীপ ঘোষ বা শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে যেভাবে চালনা করছেন তিনি সেই ভাবেই পরিচালিত হচ্ছেন। অর্থাৎ সুকান্ত রয়েছেন দিলীপ-শুভেন্দুর ছত্রছায়ায়। এই অবস্থায় তাই বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে এহেন ব্যক্তিত্বহীন মানুষকে সামনে রেখে বঙ্গ বিজেপি আগামী দিনে কতটা লড়াই করতে পারবে শাসক তৃণমূলের সঙ্গে? ২০২৪ সালেই বা দল কী করবে জেতা আসন ধরে রাখার জন্য? কার্যত তার কোনও উত্তরই মেলেনি।