নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যপালের পদে বসে যে জগদীপ ধনখড় আদতে পদ্মপালের ভূমিকাই পালন করে চলেছে সেটা বহু আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এবারে তিনি সরাশ্রী নেমে পড়েছেন হাওড়া ও বালি পুরসবার বাসিন্দাদের পুরপরিষেবা থেকে বঞ্চিত করতে। বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের তরফে কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের বেঞ্চে পুরভোট সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, হাওড়া ও বালির পৃথকীকরণ বিলে সই করেছেন রাজ্যপাল। তাই ওই দুই পুরসভায় ভোট করাতে এখন আর কোনও বাধা নেই। সেই শুনানিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে এটাও জানানো হয় যে আগামী” ২২ জানুয়ারি হাওড়া পুরনিগম ও ২৭ ফেব্রুয়ারি বালি পুরসভায় ভোট করাতে চান তাঁরা। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠকের পরে শনিবার সকালে রাজ্যপাল টুইট করে জানান, তিনি হাওড়া ও বালিকে পৃথকীকরণের বিলে সই করেননি। এই টুইট সামনে আসতেই ফের হাওড়া ও বালির পুরভোট নিয়ে জটিলতা দেখা দিল।
শনিবার টুইটারে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রী জগদীপ ধনখড় হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) বিল, ২০২১-এ অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু তা ঠিক নয়। এটি সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদের অধীনে বিবেচনাধীন রয়েছে। কারণ এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে কিছু প্রশ্নের জবাব প্রত্যাশিত।’ রাজ্যপালের এই টুইটের আগেই শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে রাজভবনে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সাক্ষাৎ শেষে রাজভবন থেকে বেড়িয়েই শুভেন্দু জানিয়ে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল তাঁকে বলেছেন, ওই বিলে তিনি সই করেননি। এদিন সকালে রাজ্যপাল টুইট করে সেই একই কথা বলেছেন। আর তার জেরেই এখন তৃণমূলের তরফে অভিযোগ উঠেছে, রাজ্যপাল শুভেন্দুর কথাতেই এই পদক্ষেপ করেছেন। তবে ঘটনা যাই হোক না কেন রাজ্যপালের এহেন অবস্থানে হাওড়া ও বালির পুরনির্বাচন ঘিরে আবারও অনিশ্চয়তার বাতাবরণ তৈরি হয়ে গেল। কবে এই দুই পুরসভায় ভোট হবে তাও কার্যত অনিশ্চিত হয়ে গেল। এর জেরে ওই দুই পুরসভা এলাকাতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
২০১৫ সালের আগে বালি আলাদা পুরসভা ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার তাঁকে হাওড়া পুরনিগমের সঙ্গে সংযুক্ত করে। তার জেরে বালির ৩৫টি ওয়ার্ড কমে দাঁড়ায় ১৬তে যা হাওড়া পুরনিগমের ৫০টি ওয়ার্ডের সঙ্গে যোগ হয়। তার জেরে হাওড়া পুরনিগমে মোট ওয়ার্ড বেড়ে হয় ৬৬। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম দিকেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বালিকে ফের হাওড়া পুরনিগম থেকে আলাদা করে পৃথক পুরসভা হিসাবে গড়ে তোলা হবে। সেই লক্ষ্যেই করার ‘দ্য হাওড়া মিউনিসিপাল কর্পোরেশন (সংশোধনী) বিল ২০২১’ আনে রাজ্য সরকার। সেই বিল বিধানসভায় পাশ হয়ে গেলেও এখন রাজ্যপাল তাতে সই করতে চাইছেন না। আর তার জেরেই এখন এই দুই পুরসভার নির্বাচন ঘিরে চূড়ান্ত জটিলতা দেখা দিল।