নিজস্ব প্রতিনিধি: হাওড়া জেলার আমতায় সংখ্যালঘু ছাত্রনেতা আনিস খান(Anis Khan) খুনের ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলার রাজনীতি। ওই ঘটনায় প্রথম থেকেই মাঠে হই হই করে মাঠে নেমে পড়েছিল বামেরা(Left)। মাঠে নেমেছিল আইএসএফও। দুই দলই মহানগরের রাস্তায় মিছিল করার পাশাপাশি আমতায়(Amta) কার্যত জঙ্গি আন্দোলন শুরু করেছিল। মুখে তাঁদের প্রকৃত খুনীকে ধরার দাবি থাকলেও আসলে প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ভোট ময়দানে নিজেদের ঝুলিতে সংখ্যালঘু সমাজের সমর্থন টেনে আনা। কেননা রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট(Minority Vote) ব্যাঙ্ক এখন কার্যত পুরোটাই রয়েছে তৃণমূলের দখলে। ওই ভোট ব্যাঙ্ক তৃণমূলের পাশ থেকে না সরলে যে তাঁদেরও বাংলার ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না সেটা বিলক্ষণ জানেন বাম নেতাদের পাশাপাশি আইএসএফের মাথারাও। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ চালানোর পাশাপাশি তাঁরা তৃণমূলের(TMC) বিরুদ্ধেও বেশ মেপে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। আর ছিল পুলিশের প্রতি তীব্র আক্রমণ। যদিও সেই রাজনীতি বামেদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে লাভের মুখ দেখাতে সমর্থ হলেও সামগ্রিক ভাবে এবারের পুরনির্বাচনে কোনও ছাপই ফেলতে পারল না।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারিতে হওয়া পুরনির্বাচনের ভোট গণনা ও ফলাফল সামনে এসেছে এদিন। আর সেই ফল বিশ্লেষন করতে গিয়েই দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে রীতিমত ভাল ফল করেছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে তাঁদের কিছুটা হলেও লড়াই দিয়েছে নির্দল ও বামেরা। বিজেপি বা কংগ্রেস সেভাবে কোনও চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে দিতে পারেনি। মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর জেলার মতো সংখ্যালঘু প্রভাবিত জেলাগুলির পুরসভাগুলিতে তৃণমূল নিরঙ্কুশ জয়ের মুখ দেখেছে। আনিস খানের মৃত্যুর ঘটনা যদি এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলত তাহলে অন্তত এই ৩ জেলার ১২টি পুরসভায় তৃণমূল জয়ের মুখ দেখতে পারতো না। আসলে বামেদের ভোট বৃদ্ধির পিছনে আনিস কাণ্ডেরও সেভাবে কোনও ভূমিকা নেই। বামেদের যে ভোট বিজেপির ঝুলিতে চলে গিয়েছিল, সেই ভোটই এখন ফিরে আসছে বামেদের ঘরে। তাই তাঁদেরও ভোটপ্রাপ্তির হার বাড়ছে। এবারের পুরনির্বাচনে দেখা যাচ্ছে বিজেপি ২৩ শতাংশ ভোট হারিয়েছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির হারের তুলনায়। ৪০ শতাংশ থেকে তাঁদের ভোট প্রাপ্তি এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশে। আর বামেদের ভোট প্রাপ্তির হার হয়েছে ১৪ শতাংশ। আগামী দিনে আবারও দেখা যাবে, বিজেপির ভোট কমছে, বাড়ছে বামেদের ভোট। এই সহজ সরল সত্যিটা বাম নেতারা বোঝেন বলেই এদিন কেউ একবারের জন্যও আনিস খানকে নিয়ে একটা শব্দও খরচ করেননি। আনিস এখন তাঁদের কাছে ক্লোজড চ্যাপ্টার।