এই মুহূর্তে

পুরনির্বাচনে কী রক্তক্ষরণ রুখবে! প্রশ্ন বঙ্গ বিজেপিতেই

কৌশিক দে সরকার: ‘আবকে বার ২০০ পার’ শ্লোগান উঠেছিল ঠিকই কিন্তু বাস্তবে সেই শ্লোগানের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি পদ্মশিবির। বরঞ্চ একুশের বিধানসভা নির্বাচন সাক্ষী থেকেছে তাঁদের ভরাডুবির। ৭৭টি আসন পেয়েই দৌড় থেমেছে বঙ্গ বিজেপির। সেই নির্বাচনের পরে যত ভোট হচ্ছে দেখা যাচ্ছে বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার ততই কমছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তো আবার জামানত বাজেয়াপ্তের ঘটনাও ঘটছে। স্বাভাবিক ভাবেই এখন বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের যে শতাধিক পুরসভায় নির্বাচন হতে চলেছে সেখানে ঠিক কত শতাংশ মানুষের সমর্থন পাবেন তাঁরা! নামতে নামতে ভোটপ্রাপ্তির হার কোথায় গিয়ে থামবে? বামেরাও ক্ষমতা হারিয়ে এই রক্তক্ষরণের মুখে পড়েছিল। সেখান থেকে তাঁরা রাজ্য বিধানসভা থেকে নিশ্চিহ্ন হয়েও গিয়েছে। কিতু তারপরেও সেখান থেকেই কিন্তু বামেদের ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনাও চোখে পড়ছে। কিন্তু বিজেপি, কোথাও তো সেই ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা চোখে পড়ছে না।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ২টি আসন। ভোটপ্রাপ্তির হিসাবে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট। এর ঠিক দুই বছর পরে হওয়া ২০১৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রাপ্তি ছিল মাত্র ৩টি আসন। কিন্তু সেবার তাঁরা ভোট পেয়েছিলেন ১০ শতাংশের সামান্য বেশি। অর্থাৎ ওই ২ বছরেই বাংলায় বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে ৭ শতাংশ ভোট কমে গিয়েছিল। এর মূল কারণ হিসাবে উঠে এসেছিল মোদি-মমতার প্রভাবের কথা। ২০১৪ সালে মোদির পক্ষে যে বাড়তি ভোট পড়েছিল বিজেপি বাক্সে তা কিন্তু আর স্থায়ী হয়নি। বিধানসভা নির্বাচনে মমতার বিকল্প তখন হয়ে উঠতে পারেনি বিজেপি। ছিল আ তাঁদের কোনও মুখও। ফলে দেখা যায় বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার কমেছে। পরিবর্তে মমতার বিরুদ্ধে থাকা বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছিল প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে আবারও সেই মোদি হাওয়ায় ফের ঘোরে বাংলার রাজনীতির চাকা।

দেখা যায় উনিশের ভোটে বিজেপি বাংলা থেকে শুধু যে ১৮টি আসন জিতে নিয়েছে তাই নয়, এক লাফে তাঁদের ভোটপ্রাপ্তির হার পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৪১ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ ৩ বছরে বিজেপি ভোট বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। বিপক্ষে বাম ও কংগ্রেস আলাদা আলাদা করে ভোট লড়াই করে ৫ ও ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচন ও ২০১৯ সালে নির্বাচনের তুল্যমূল্য বিচার করলে দেখা যাবে বাংলায় মমতা বিরোধী ভোট কার্যত একই থেকে গিয়েছিল ওই সময়ে। সেখানে কোনও হ্রাস-বৃদ্ধি হয়নি। খালি ২০১৬ সালে যে ভোট গিয়েছিল বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষে সেটাই ২০১৯ সালে চলে যায় বিজেপির পক্ষে। অর্থাৎ বাংলায় থাকা তৃণমূল বিরোধীদের মনে হয়েছিল মমতা বিরোধীতার প্রশ্নে বাম-কংগ্রেস অপেক্ষা বিজেপি বেশি খাঁটি। সেই বিশ্বাসেই কিন্তু ২০১৯ সাল থেকেই বাংলায় বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক বাড়তে শুরু করে। বাড়ে বিজেপির পসারও। কিন্তু একুশের নির্বাচনে আবারও ধাক্কা আসে বিজেপির বাক্সে। এই নির্বাচনে বিজেপি ৭৭টি আসন পেয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে উঠে এলেও দেখা যায় তাঁদের ভোটপ্রাপ্তির হার কমে গিয়েছে। তাঁদের প্রাপ্তি দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশ ভোট। এর পর থেকে বাংলায় যত নির্বাচন হচ্ছে দেখা যাচ্ছে তার সবকটিতেই বিজেপির ভোট প্রাপ্তির সংখ্যা ক্রমশ কমছে। তুলনায় বাড়ছে বাম-কংগ্রেসের ভোট। অর্থাৎ আবারও বাংলায় বিরোধী শিবিরের ভরকেন্দ্রের পরিবর্তন ঘটছে।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পরে সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ২টি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন ও ১টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার ছিল গড়ে ৯ শতাংশের আশেপাশে। এর মধ্যে ভবানীপুর ও জঙ্গিপুরে বিজেপি পেয়েছিল ২২ শতাংশের ভোট ও সামসেরগঞ্জে পেয়েছিল ৫ শতাংশ ভোট। এর ঠিক ১ মাস বাদে অক্টোবরে হয় আরও ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন। তাতে বিজেপির গড় ভোট প্রাপ্তির হার দাঁড়িয়েছিল ১৪ শতাংশ। ওই নির্বাচনের পরে হয়ে যাওয়া কলকাতা পুরনিগমের নির্বাচনে বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার দাঁড়ায় মাত্র ৯ শতাংশ। একই ভাবে চলতি মাসে রাজ্যের যে চারটি পুরনিগমে যে ভোট হয়ে গেল সেখানে বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার দাঁড়ায় গড়ে সেই ১৪ শতাংশই। স্বাভাবিক ভাবেই আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের যে শতাধিক পুরসভায় নির্বাচন হতে চলেছে সেখানেও যে বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার গড়ে ১৪ শতাংশের আশেপাশেই থাকবে সেটা হলফ করেই বলা যায়। মানে কোনওভাবেই বিজেপি যে আর উনিশের লোকসভা ভোটের সময়কার ৪০ শতাংশের ভোটের ধারে কাছে গিয়েও পৌঁছাবে না সেটা পরিষ্কার।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

শনিবারের মধ্যে কলকাতার তাপমাত্রা পৌঁছে যাবে ৩৭ ডিগ্রির ঘরে

ঘাটাল লোকসভা জিততে গেলে মানুষের ভালোবাসা আদায় করতে হবে: দেব

কৃষ্ণনগরে আবার ইডি এলে সরপুরিয়া খেয়ে যাবে, খোঁচা মহুয়ার

শেখ শাহজাহানের জামিনের আর্জি খারিজ, জেল হেফাজতের নির্দেশ

রাজ্যে বিশেষ পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে অলোক সিনহা

চাই পুরসভা, চাই পূর্ণাঙ্গ থানা, গলা তুলছে আমোদপুর

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর