নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বাংলা ছবির জগতে তিনি এক অবিস্মরণীয় ব্যাক্তিত্ব। উত্তম পরবর্তীযুগে যারা বাংলা ছবিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন হলেন তাপস পাল। ‘সাহেব’ , দাদার কীর্তি, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, গুরুদক্ষিণা’র মত ছবিতে তাঁর অভিনয় আজও মনে রেখেছেন দর্শক। তবে এহেন অভিনেতা তাপস পালের অধ্যায়টা বড় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। যা মেনে নিতে পারেননি তাঁর সহকর্মীরা। এবং স্বাভাবিকভাবেই সেই শোক আজও কাটিয়ে উঠতে পারেননি তাঁর পরিবার। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মেয়ে সোহিনী আজও বাবাকে ভীষণভাবে মিস করেন। তাঁর সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলেই তার আভাস মেলে। বাবার সঙ্গে কাটানো পুরানো দিনের ছবি শেয়ার করে বাবার জন্মদিনেও আবেগঘন হয়েছেন তাপসকন্যা সোহিনী। আজ বাবাকে তাঁর আরও বেশি করে মনে পড়ছে।
তাঁর কাছে প্রিয় অভিনেতা তাঁর বাবা তাপস পালই। তারকার আভিজাত্যভরা জীবন হলেও মা বাবার ভূমিকা পালনে সকলেই সমান। ব্যাতিক্রম ছিলেন না তাপস পাল। মেয়ের স্কুলের মিটিং অ্যাটেন্ড করা, মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসা-নিয়ে আসা, মেয়ের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাঁকে দেখা যেত। বাবা ছিলেন সোহিনীর কাছে প্রিয়বন্ধু। আর সেই প্রিয়বন্ধুকে কি ভোলা যায়? না, ভোলা যায়না। না দেখেও থাকা যায়না। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটাই করতে হচ্ছে তাঁকে। বহুদিন কাছের মানুষকে না দেখার যে কি কষ্ট তা এখন মর্মে মর্মে বোঝেন সোহিনী।
বাবার কথা মনে পড়ায় তাঁর অভিনীত ছবি আজ তিনি দেখবেন না। কিন্তু এমনটা কেন? কারণ বাবা তাপস পাল যে রকম দুখী চরিত্রে অভিনয় করতেন তা দেখে এমনিতেই মন ভারাক্রান্ত হয়ে যেত সোহিনীর। আর এখন তো তা দেখার আর কোনও প্রশ্নই নেই। বাবার অভিনীত সব ছবির গল্প বাবার মুখ থেকেই শুনতেন সোহিনী।
এক সময় অভিনেতার ইমেজ ছেড়ে বেরিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন তাপস পাল। সেই সময় তাঁর বিভিন্ন উক্তিকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যা তাঁর মৃত্যুর পরেও হয়তো তাঁর পিছু ছাড়েনি। সোহিনী জানাচ্ছেন বাবার সেই উক্তিকে সমর্থন আমি বা মা কেউই করিনা। কিন্তু কেউ কি কখনও তাঁর বাবার মনেও অবস্থা বুঝেছিলেন? ব্যাক্তি তাপস পাল কেন এগুলি বললেন তা জানতে চেয়েছিলেন? না, জানতে চাননি। একাকিত্ব ও মন খারাপই শেষ সময়ে দোসর হয়েছিল তাঁর।
জীবিত থাকলে অভিনেতার বয়স হত ৬৩ বছর। তবে মেয়ে ও স্ত্রী কখনই মনে করেন না তাপস পাল নেই। তাঁরা বিশ্বাস করেন তিনি সর্বদা তাঁদের সঙ্গেই আছেন আর সেই অনুভূতি থেকেই তাপস পালের জন্মদিনে রাত্রিবেলাতেই তাঁর পছন্দের ক্রিম কেক কাটেন স্ত্রী ও কন্যা দুজনে । এই কেক সোহিনীর এক বান্ধবী বানিয়ে এনে দিতেন। এছাড়াও খেতে এবং খাওয়াতে পছন্দ করতে অভিনেতা। জন্মদিনে বিশাল কিছু আয়োজন না করা হলেও সাধারণের মধ্যেই অসাধারণত্ব থাকত। ‘সাহেব’-র পছন্দের ভাত, ডাল, ভাজা, পোস্ত, মাছের নানা পদ নিজের হাতে বানাতেন তাপসজায়া নন্দিনী। তিনি মানুষকে খাওয়াতেও যেহেতু খুব ভালবাসতেন তাই তাঁর সেই ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানিয়েই কিছু অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে অভিনেতার পরিবার। তাতে থাকছে খিচুড়ি, ডিমের তরকারি, মিষ্টি, ও ঠাণ্ডা পানীয়।
এদিন প্রয়াত অভিনেতা তাপস পালের জন্মদিনে সোশাল মিডিয়ায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। সোহিনীকে ব্যাক্তিগত বার্তা পাঠিয়েছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। কন্যা সোহিনীর কথাতেই স্পষ্ট ক্ষোভ, না পাওয়া। বাবার জন্মদিনে তাই প্রকৃতিও কাঁদছে এমনটা বলে নিজের শোকাহত মনের কথাই বলতে চেয়েছেন তা পরিস্ফুট।