নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা ইন্ডাস্ট্রি যতদিন আছে, ততদিন সত্যজিৎ রায়ের বাঘাও আছে। বাংলার ছবির কমেডি যার থেকে উত্থান, ধনঞ্জয়ের সেই রাঁধুনির আজ জন্মদিন। প্রতিটি প্রজন্ম ধরে বাঙালি যার খোঁজ করে যাচ্ছেন অনবরত, আজ বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মহান ব্যক্তি রবি ঘোষের জন্মদিন। পর্দায় তিনি যে রূপ দেখিয়ে গিয়েছেন, তা অবিচল থাকবে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির মৃত্যু পর্যন্ত।
যদিও তা কখনই হওয়ার নয়, যতদিন বাঙালি আছে, বঙ্গ ইন্ডাস্ট্রিও আছে, এবং উত্তমকুমার, রবি ঘোষ, সত্যজিৎ রায়ের মতো একাধিক ঐশ্বরিক শক্তিশালী পুরুষরাও রয়ে যাবেন। পর্দার সেই কৌতুক কিংবদন্তি অভিনেতা রবি ঘোষের আজ জন্মদিন।
১৯৩১-এর আজকের দিনে কোচবিহারে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন অভিনেতা। পুরো নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার। পরবর্তীতে রবি ঘোষ নামেই পরিচিতি হয়ে যান তিনি সবার কাছে। ১৯৪৯-এ মেট্রিক পাশ, বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারপাশ, আশুতোষ কলেজে গ্রাজুয়েশন। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। অভিনেতার দুই বিয়ে, প্রথমে বিয়ে অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তকে।
তাঁর মৃত্যুর ১০ বছর পর বৈশাখী দেবীকে বিয়ে করেন তিনি। শোনা যায়, অভিনেতা নয় বডিবিল্ডার হতে চেয়েছিলেন রবি ঘোষ। খেতেও খুব ভালবাসতেন। লুচি ও পাঁঠার মাংস ছিল তাঁর প্রিয় খাবার। আরও জানা যায়, অভিনেতার বাবা কখনই অভিনয় পছন্দ করতেন না। বলা চলে, বাবার কথা অবাধ্য হয়েই অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ কিংবদন্তি তারকার।
একটি ছবিতে ‘সংবাদপত্র বিক্রেতা’র চরিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন তিনি। মাত্র ৩০ সেকেন্ডের অভিনয় দেখিয়েই মুগ্ধ করেছিলেন মৃণাল সেনকে। জানা যায়, ১৯৫৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর উৎপল দত্তের পরিচালনায় মিনার্ভা থিয়েটারে এলটিজির নিবেদনে ‘অঙ্গার’ নাটকের প্রথম শোয়ের পাঁচদিন আগেই বাবাকে হারিয়েছিলেন অভিনেতা। কেরিয়ারে তরুণ মজুমদার, সন্দীপ রায়, গৌতম ঘোষ, মৃণাল সেন, অঞ্জন চৌধুরী, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মতো একাধিক দাপুটে পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
শোনা যায়, অভিনেতার একজন অন্ধভক্ত ছিলেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চনও। তবে তাঁর নেশা ছিল শরীরচর্চার। কিন্তু অভিনয়কেই ভালোবেসে ফেললেন অভিনেতা। ‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘আরণ্যের দিনরাত্রি’র মতো একাধিক জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি উপহার দিয়েছিলেন তিনি বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে। তাঁর অভিনয় সহজে ভোলার নয়।
পর্দায় তাঁর মারাত্মক অঙ্গভঙ্গি, দুর্দান্ত কৌতুক অভিনয়, সবটাই পাগল করে দিত অনুরাগীদের। তাঁর অভিনীত অন্যতম ছবি ছিল ধন্যি মেয়ে। যেখানে তিনি পুরোহিত তোতলা ভটচাজের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। আজ তাঁর জন্মদিনে চলুন তাঁর অভিনীত একটি জনপ্রিয় সিনেমার গানের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। ১৯৯৭ সালের ৪ নভেম্বর মাত্র ৬৫ বছরে মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক, তাপস পাল, চিরঞ্জীতের মতো একাধিক টলি সুপারস্টারের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। তিনি সর্বকাল বাঙালির স্মৃতিতে তাজা থাকবেন তাঁর অসাধারণ অভিনয় বলে।
