নিজস্ব প্রতিনিধি: পুরোদস্তুর হাইটেক গ্রিনসিটি। এহেন শহরের বুকে বসবাস করেও যদি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটার হতে হয় তাহলে কার না রাগ হবে! সেটাই হয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসছেন কলকাতার(Kolkata) কান ঘেঁষে থাকা নিউটাউনের(Newtown) হাজার পাঁচেক বাসিন্দা। কেননা তাঁদের এলাকাকে গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেই। এমনকি এই বিষয়ে তাঁদের কোনও তথ্যই জানায়নি স্থানীয় প্রশাসন। সম্প্রতি ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ শুরু হয়েছে। সেই সূত্রেই সামনে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর এর জেরেই ক্ষোভে ফুঁসছেন নিউটাউনের একাংশের বাসিন্দারা। যদিও স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি আকারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তাতে ক্ষোভের আগুন নিভছে না। বরঞ্চ আদালতে মামলা ঠোকার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। এমনকি পঞ্চায়েত নির্বাচন বয়কট করার ডাকও দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন ১০০দিনের কাজের প্রকল্পে পরিবর্তন আনছে মোদি সরকার
ঠিক কী হয়েছে? রাজারহাট নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া ১সি, ১ডি, ১এ (উত্তর ভাগ), ২বি, ২ই, ১বি, ২ এলাকাকে জ্যাংড়া হাতিয়াড়া-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের(Jangra Hatiyara 2 GP) এলেকার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সেটা করা হয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁরা যখন ওই এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তখন থেকেই এলাকাটি নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ(NKDA) বা এনকেডিএ’র হাতে রয়েছে। এই সংস্থাটিই ওই এলাকায় যাবতীয় নাগরিক পরিষেবা প্রদান করে। এমনকি তার জন্য করও দেন তাঁরা। এখন তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম ভাবে কথা না বলে তাঁদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এই এলাকাকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ যে গ্রাম পঞ্চায়েতে ওই এলাকাকে ঢোকানো হয়েছে তার সঙ্গে কোনও যোগই নেই ওই এলাকার বাসিন্দাদের। নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়ার ৭টি এলাকাকে গ্রাম পঞ্চায়েতের পৃথক পৃথক ৮টি আসনের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সামান্য পরিকাঠামোও নেই নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে। সব থেকে বড় কথা তাঁরা যেখানে কর দেন নিয়মিত সেখানে কেন তাঁদের অন্ধকারে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা সাফ জানিয়েছেন তাঁরা এই সিদ্ধান্ত মানছেন না ও এই বিষয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন খুব শীঘ্রই।
আরও পড়ুন মমতার বিদেশ সফরে আর বাধা দেবে না মোদি সরকার
স্থানীয় বিজেপি’র তরফ থেকে অবশ্য এই ঘটনার পিছনে রাজনীতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের দাবি, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৫৬ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূল(TMC) প্রার্থী তাপস চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি এনকেডিএ এলাকায় বিজেপির(BJP) তুলনায় ৭৯৮টি ভোট কম পেয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় বসবাসকারী ১০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দাদের মধ্যে সেই নির্বাচনে ৬২০০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। রাজারহাট-বিধাননগর পুরনিগম গঠনকালের সময় থেকেই এনকেডিএ’র বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁদের এলাকাকে ওই পুরনিগমের আওতায় নিয়ে আসতে। কিন্তু তা না করেই তাঁদের এলাকাকে গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকায় পরিণত করে দেওয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি। ভূ-ভারতে কেউ কোনওদিন শোনেনি শহর এলাকাকে গ্রাম বানিয়ে দেওয়ার কথা। সব টাই করা হয়েছে সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল যাতে বিশেষ সুবিধা পায় সেটা দেখার জন্যই। যদিও স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের হাতে নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার কোনও পরিকাঠামো না থাকায় এনকেডিএ’র থেকে সংযোজিত হওয়া এলাকায় এনকেডিএ-ই যাবতীয় পরিষেবা আগের মতোই দেবে। খালি এলাকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হবে এবং সেখানকার হাজার পাঁচেক বাসিন্দা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভোটার হিসাবে চিহ্নিত হবেন। তাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটও দিতে পারবেন।