নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP) তরফে বার বার হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছিল, ডিসেম্বর মাসে বড় খেলা হবে বাংলার বুকে। সরকার নাকি উল্টে যাবে। বাংলার সবচেয়ে বড় ডাকাত নাকি জেলে যাবে। সেই সব ভাঁওতাবাজি কথায় রাজ্য রাজনীতিতে প্রথম দিকে কিছুটা হলেও শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরে সেই বিজেপিই সেই সময়সীমা পিছিয়ে দিতে শুরু করে ক্রমশ। কখনও বলে ডিসেম্বর নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে হবে সেই খেলা। আবার কখনও বলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, ২০২৪ সালে হবে সেই খেলা। আসলে যখন কোনও খেলার মতোই নিজেদের অবস্থা থাকে না তখন বিপক্ষ শিবিরকে এই ধরনের ভুয়ো ঠুঁটো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে নিজেদের বীরত্ব তুলে ধরেন অনেকেই। বঙ্গ বিজেপিও সেই পথেই হাঁটা দিয়েছিল। কিন্তু সেই বেলুন এদিন ফাটিয়ে দিলেন তৃণমূলের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)। তিনি ভরা সভায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের সামনে অধিকারীদের শহরের বুকে দাঁড়িয়ে দিলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে ছোট্ট করে দলের দরজাটা খোলা যাক।’ এই কথার অর্থ বুঝতে অসুবিধা হয়নি বাংলার মানুষদের। আর এই কথার জেরেই এখন গেল গেল রব পড়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে।
আরও পড়ুন ‘বিশ্বাসঘাতক বেইমান মুক্ত মেদিনীপুরের মাটি চাই’, ডাক অভিষেকের
শনিবার পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার কাঁথি(Contai) শহরের প্রভাত কুমার কলেজের মাঠে ছিল তৃণমূলের সভা। সেই সভায় প্রধান বক্তা হিসাবেই উপস্থিত ছিলেন অভিষেক। সেই সভা থেকেই তিনি নাম না করে ছত্রে ছত্রে আক্রমণ শানেন অধিকারীদের। সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের কর্মীদের লড়াই করার বার্তাও দেন। তবে সব থেকে বড় বার্তা অবশ্যই বিজেপিকেই দিয়েছেন। এদিন অভিষেক বলেন, ‘১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। তার জন্য যারা কাজ করেছেন তাঁরা টাকা পাচ্ছিলেন না। তা নিয়ে আবার জনস্বার্থ মামলা করেছে। যখন তৃণমূলে ছিল তখন কেন জনস্বার্থ মামলা করল না? ও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছে বলে ওই দলের শনি, রাহুর সঙ্গে কেতুর দশাও শুরু হয়েছে। আমাকে চাপ বছর জেলে রাখলে ওর ৪০ বছর জেল হওয়া উচিত। ইডি, সিবিআই এবং বিচেরা ব্যবস্থার অনৈতিক নিরাপত্তা না থাকলে মানুষ এদের ধরে পেটাত। যার মাথা খারাপ তাকে তো ‘গেট ওয়েল সুন’ই বলবে। মাথার ঠিক নেই, পাগল হয়ে গিয়েছে। আজ ঢুকলাম আমাকে ৬ মাস যে বুথে বলবেন সেখানে যাব। আজ ২০০ মিটারের মধ্যে সভা করলাম। এর পরের বার ২০ মিটারের মধ্যে সভা করব।’
আরও পড়ুন ‘আমি ওদের উলঙ্গ করে দেব’, কাঁথিতে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
এরপরেই তিনি বলেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র লড়ছেন। কিন্তু আমরা থেমে থাকার পাত্র নই। আমরা আজও মানুষের জন্য লড়াই করতে বদ্ধপরিকর। তৃণমূলের বুথ এবং অঞ্চল সভাপতিরা গ্রামে যান। কে কী দল করে তা দেখার দরকার নেই। আমাদের কোনও জাতিধর্ম নেই। সব পরিষেবা মানুষ পাচ্ছেন কি না তা দেখতে হবে। কেউ ভয় দেখালে আপনারা ভয় পাবেন না। আমি আসব। এই তো বোমা দিয়ে আমাকে চমকানোর চেষ্টা হয়েছিল। আমি এসেছি। কলকাতা থেকে ২ ঘণ্টার রাস্তা। যাঁরা ভাবছেন মানুষের কথা না শুনে পঞ্চায়েত চালাবেন তাঁদের আমি হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছি আর এক বার, আপনাদের টিকিট দেওয়া তো দূরের কথা আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসন জেলে ঢোকাবে। এই জেলায় দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। ১৮০ কোটি টাকার টেন্ডার এক জন পেয়েছে। কোনও কাজ হয়নি। আগামিদিনে যারা যোগ্য তারাই দলের প্রথম আসনে বসবে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি। যারা পঞ্চায়েতে নয়ছয় করেছে, আমার কাছে খবর আছে প্রধান হওয়ার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা, ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। এগুলি যদি অক্টোপাসের শুঁড় হয়, অক্টোপাসের মাথাটা ২০০ মিটার দূরে বসে আছে। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। সকলের নামের তালিকা আমার কাছে আছে। তোমরা তৈরি হও। মানুষ যাদের সার্টিফিকেট দেবে সেই পঞ্চায়েতে প্রার্থী হবে। চাটুকারিতা করে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়া যাবে না।’
আরও পড়ুন মরিষদার পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধানকে ইস্তফার নির্দেশ অভিষেকের
এরপরেই অভিষেক দলের দরজা খোলার প্রসঙ্গে চলে আসেন। বলেন, ‘আপনাদের ভাবাবেগকে সম্মান দিয়েছি। দুঃসময়ে কর্মীরা যে ভাবে লড়াই করেছে তাদের ওপর মর্যাদা রেখে আমি দরজা খুলছি না। দরজা খুললে বিজেপি দলটাই উঠে যাবে। বলুন দরজা খুলব? আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, দরজাটা খুলে দিই। আগামী সপ্তাহে দরজাটা খুলি তা হলে ৫ সেকেন্ডের জন্য। আমি একটু ছোট্ট করে দরজাটা খুলতে চাই। ডিসেম্বর মাসে ছোট্ট করে দরজাটা খোলা যাক। যারা বেছে বেছে দলের জন্য কাজ করবে। কারও মাথার ওপর বসবে না। সেই দায়িত্বও আমার। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি।’ এখানেই থামেননি অভিষেক। তিনি আরও বড় ঘোষণা করে বলেন, ‘আমার কথা লিখে রাখুন, নন্দীগ্রামে আবার ভোট হবে। ফল বাতিল হবে। আমি আবার ২ মাসের মধ্যে এখানে আসব। সুনীল মণ্ডল, এনসি গিরি নামে ঠিকাদার, সরকারি কর্মচারী অনীশ ঘোষের সঙ্গে কার সম্পর্ক? সব তথ্য দলের কাছে আছে। প্রয়োজনে সেই তথ্য সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া হবে। সংবাদমাধ্যম এই তথ্য খতিয়ে দেখতে পারে। আজ এই সভা থেকে ওই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হল। আগামী দিনে তা বাংলার সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে হবে।’