নিজস্ব প্রতিনিধি: ‘ব্যক্তিস্বার্থে নয়, যাঁরা ভালবেসে দল করবেন, দলের জন্য বেশি সময় দেবেন, তাঁদেরকেই দল আরও বেশি করে কাজে লাগাবে। জেলায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষদের সামনের সারিতে আনতে হবে। সংগঠনের কাজে বেশি করে ব্যবহার করতে হবে। মানুষকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাতে হবে, তাদের ভুল ভাঙাতে হবে। দলে নতুন-পুরনোদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারের কথা, উন্নয়নের কথা বেশি করে প্রচার করতে হবে। বিরোধীরা অপপ্রচার চালাচ্ছে। পাল্টা প্রচারে নামতে হবে।’ এই বার্তা তৃণমূলের নম্বর টু তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee)। শুক্রবার তিনি বৈঠকে বসেছিলেন দলের বাঁকুড়া(Bankura), বিষ্ণুপুর(Bishnupur) ও পুরুলিয়া(Purulia) সাংগঠনিক জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে। সেখানেই তিনি এই বার্তা দেন বলে শনিবার তৃণমূল(TMC) সূত্রে জানা গিয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন জেলে। অনুব্রত মণ্ডল সিবিআইয়ের হেফাজতে। এই অবস্থায় অভিষের বার্তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকালের পরে অভিষেক দুই দফায় বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর ও পুরুলিয়া সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিও। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই ৩ জেলায় উনিশের ভোটে চমকে দেওয়ার মতো ফল করেছিল বিজেপি। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর এই ৩ লোকসভা কেন্দ্রেই জয়ী হয় বিজেপি। একুশের ভোটেও পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার বেশির ভাগ বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছে বিজেপি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই দুই জেলায় ভাল ফল করতেই হবে তৃণমূলকে। নাহলে ২০২৪ এর নির্বাচনে এই দুই জেলার ৩টি লোকসভা কেন্দ্র কোনওভাবেই বিজেপির কব্জা থেকে বার করতে পারবে না তৃণমূল। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই অভিশগেক চাইছেন দলের সবাই যেন মিলেজুলে কাজ করেন। পার্থ ও অনুব্রতকাণ্ডে যদি মানুষের কাছে ভুল বার্তাও পৌঁছে গিয়ে থাকে তাহলে তা যেন দলের নেতাকর্মীরা শুধরে দেন। সেই লক্ষ্যেই গতকালের বৈঠক ডেকেছিলেন অভিষেক নিজেই।
গতকালের বৈঠকে অভিষেক সব থেকে বেশি জোর দিয়েছেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের সংগঠনের কাজে বেশি করে লাগানোর বিষয়ে। দলকে যাঁরা ভালবেসে ব্যক্তিস্বার্থকে একপাশে সরিয়ে দেখে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করবেন, তাঁদেরকে বেশি করে দলের কাজে লাগাতে বলেছেন তিনি। এবিষয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যে বিশেষ ভাবে নজর রাখবে সেতাও বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন অভিষেক। পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়া জেলায় বাড়তি নজর রয়েছে দলের। উন্নয়ন সত্ত্বেও ওই জেলায় দলের ফল আশানুরূপ হয়নি উনিশের ভোটে। একুশের ভোটে কিছুটা হলেও মাটি ফিরে পেয়েছে দল। কিন্তু চব্বিশে বিজেপিকে আর মাটি ছাড়তে চান না অভিষেক। তাই অবিলম্বে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও বাড়ানোর জন্য পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্বকে আরও বেশি করে পরিশ্রম ও মানুষের কাছে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যে কোনও ধরনের দুর্নীতির ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে তৃণমূল, সেই বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। বাংলার মানুষের কাছে দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে বদ্ধপরিকর অভিষেক। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার পাশাপাশি দল ও দলের জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি।