নিজস্ব প্রতিনিধি: নিউটনের সূত্র, সব ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। সেটাই এখন রাজ্য রাজনীতিতে ধেয়ে এসেছে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর(Suvendu Adhikari) দিকে। সিঙ্গুরের(Singur) মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি বেশ বড় মুখ করে ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূলের(TMC) জাতীয় তকমা চলে যাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে(Amit Shah) নাকি ৪ বার ফোন করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই ফোনে তিনি নাকি শাহের পা জড়িয়ে ধরে তৃণমূলের হারানো তকমা ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন নিবেদন করেন। শুভেন্দুর এই দাবি ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এবার সেই ঘটনাকে আরও টেনে নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিস্ফোরক এক ট্যুইট করলেন। জানালেন, শাহ নাকি শুভেন্দুকে এই গোটা ঘটনায় কড়া ভর্ৎসনা করেছেন।
আরও পড়ুন অভিষেকের অভিমতে খুশি বাংলার রামধনু পরিবার
কী ট্যুইট করেছেন কুণাল? তৃণমূলের মুখপাত্রের দাবি, ‘নিজের নাম জড়িয়ে @MamataOfficial সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলায় শুভেন্দুর ওপর ক্রুদ্ধ অমিত শাহ। তিনি ল্যান্ডলাইন থেকে ফোনে শুভেন্দুকে ভর্ৎসনা করেছেন বলে সূত্রে খবর। তিনি নাকি বলেছেন, নিজেরা বাংলায় কিছু করতে পারো না। কেবল এজেন্সির ভরসায় নাচো। এখন আবার আমার নাম জড়ালে! এসব চলবে না।’ কুণালের এই ট্যুইটের বাইরেও অবশ্য বঙ্গ বিজেপি সূত্রে আরও অনেক কিছুই জানা গিয়েছে। ঘটনা হচ্ছে, শুভেন্দুর দাবিকে চূড়ান্ত মিথ্যা কথা বলে ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি তিনি এটাও দাবি করেছেন যে এই ঘটনা প্রমাণিত হলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেবেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির পরেই শুভেন্দু পাল্টা দাবি করেছিলেন যে, তিনি প্রমাণ দেবেন। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিক বৈঠক করলেও কোনও প্রমাণ দিতে না পেরে আইনি মারপ্যাঁচের কথা বলেছিলেন। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীদের ফোনের কললিস্ট এভাবে প্রকাশ করা ঠিক নয় বলে জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। এবার সেই ঘটনাতেই শুভেন্দুকে টুইটে খোঁচা দিলেন কুণাল।
আরও পড়ুন সিভিক ও ভিলেজ পুলিশদের নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত মমতার সরকারের
যদিও এর বাইরে বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP) সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহ নাকি শুভেন্দুকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ‘নিজের এক্তিয়ারে থেকে কাজ করুন।’ নাহলে দল নাকি তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে বেশি সময় নেবে না। সূত্রের দাবি, শুভেন্দুর ঘটনায় এখন সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে পড়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং অবশ্যও মোদি সরকার ও বিজেপি। কেননা তৃণমূল সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, তাঁদের ল্যান্ডলাইন ফোন থেকে মোবাইল সবই নাকি ট্যাপ করা হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে। এতদিন কেন্দ্র সরকার সেই সব অভিযোগ খন্ডন করে এসেছ। কিন্তু শুভেন্দুর দাবি এখন বিরোধীদের অভিযোগকেই প্রামাণ্য তথ্য হিসাবে তুলে ধরছে। যা কার্যত শাহের ও কেন্দ্র সরকারের মুখ পোড়াচ্ছে। এই ঘটনায় শাহের নামও জড়িয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। আর তাতেই নাকি রীতিমত ক্ষুব্ধ শাহ। সেই সঙ্গে বঙ্গ বিজেপি সূত্রে এটাই জানা গিয়েছে, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় যেভাবে শুভেন্দু ভরা হাটে সামনে এনেছেন তাতেও নাকি খুবই ক্ষুব্ধ শাহ। এমনকি ফোনে তিনি নাকি শুভেন্দুকে এটাই জিজ্ঞাসা করেছেন, এসব কী তিনি পরিকল্পনা মাফিক করেছেন? বঙ্গ বিজেপির সূত্রে দাবি, শাহ নাকি শুভেন্দুকে জানিয়ে দিয়েছেন, এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে কাজ না করলে দল তাঁকে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হবে। সেক্ষেত্রে ফেরানো হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তাও। মুখোমুখি হতে হবে সিবিআই তদন্তেরও।
আরও পড়ুন উনিশের ভোটে জেতার মূলে ভিভিপ্যাট কারচুপি, অস্বীকার কমিশনের
বঙ্গ বিজেপির অপর একটি অংশের দাবি, শুভেন্দু শাহের নাম জড়িয়ে যা কিছু করেছেন বা বলেছেন তা পুরো ছক কষে। কেননা সোমবার মুকুল রায় দিল্লি গিয়েছেন আর ঠিক তার পরের দিন শুভেন্দু সিঙ্গুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই সব দাবি করেছিলেন। বঙ্গ বিজেপির অনেকের ধারনা মুকুল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গুরুত্ব পেয়ে গেলে শুভেন্দুর ক্ষমতা খর্ব হতে পারত ষোলআনাই। সেই ভয়ে শুভেন্দু শাহকে জড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এই মন্তব্য করেন। সবতাই শাহকে চাপে রাখার কৌশল ছিল যাতে তিনি মুকুলকে বিশেষ পাত্তা না দেন। কিন্তু সেই করতে গিয়ে এখন নিজেই চাপে পড়ে গিয়েছেন শুভেন্দু।