নিজস্ব প্রতিনিধি: নারদ কাণ্ডের চার্জশিট প্রদানকে ঘিরে রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইডি ও সিবিআইয়ের বিরোধ চট করে মেটার কোনও লক্ষ্মণই দেখা যাচ্ছে না। কেননা ২২ তারিখ দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার কোনও আধিকারিক স্পিকারের ডাকে রাজ্য বিধানসভায় হাজিরা নে দেওয়ায় ফের এই দুই সংস্থাকে চিঠি পাঠিয়ে তলব করতে পারেন অধ্যক্ষ বিমানবাবু। তিনি নিজেই এই বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘‘বিষয়টি এখানেই শেষ হচ্ছে না। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।’ একইসঙ্গে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা স্পিকারের তলব এড়িয়ে যাওয়ায় বিধানসভার গরিমা ‘ক্ষুণ্ণ’ হয়েছে বলেই মনে করছে বিধানসভার সচিবালয়। একই সঙ্গে যে ভাবে চিঠি ও ইমেল পাঠিয়ে ‘দায়সারা’ গোছের উত্তর দেওয়া হয়েছে, তাতেও খুশি নন বিমানবাবু। তাই ফের দুই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তলব করা হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
নারদকাণ্ডে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিনা অনুমতিতে রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন দুই মন্ত্রী মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নামে চার্জশিট জমা দিয়েছে আদালতে। এই ঘটনায় বিধানসভার সার্বভৌমত্বের অপমান ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের লঙ্ঘন বলে চিহ্নিত করেন অধ্যক্ষ। এরপরেই অধ্যক্ষের নির্দেশে বিধানসভার সচিবালয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর চিঠি পাঠিয়ে ইডির রথীন বিশ্বাস ও সিবিআইয়ের ডিএসপি সত্যেন্দ্র সিংহকে ২২ সেপ্টেম্বরে বিধানসভায় হাজিরা দিতে বলে। কিন্তু গতকাল ইডি বা সিবিআইয়ের কোনও আধিকারিকই বিধানসভায় হাজিরা দেননি। বরঞ্চ ইডি চিঠি পাঠিয়ে ও সিবিআই ইমেল করে জানিয়েছিল, তাঁরা আদালতের নির্দেশে নারদকাণ্ডের তদন্ত করছেন এবং রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপালের অনুমতি নিয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন। তাই এক্ষেত্রে বিধানসভার অবমাননা করা হয়নি ও আইন লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটেনি। তাছাড়া আর্থিক তছরুপের মামলায় কোনও বিধায়ক বা মন্ত্রীর নামে চার্জশিট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষের অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজনও নেই বলে ইডি ও সিবিআই জানিয়েছে।
কিন্তু ইডি ও সিবিআইয়ের এই ব্যাখা মানতে রাজি নন অধ্যক্ষ। তিনি মনে করেন, বিধানসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে হলে স্পিকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রিভেনশন অব কোরাপশান অ্যাক্ট ১৯(১) ধারায় চার্জশিট দেওয়ার ক্ষেত্রে ইডি ও সিবিআইয়ের তাঁর অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রে সিবিআই ও ইডি তেমনটা করেনি। একইসঙ্গে তাঁর তলবে সাড়া না দিয়ে বিধানসভায় হাজিরা এড়িয়ে গিয়ে ইডি ও সিবিআই কার্যত স্বাধিকারভঙ্গের দোষে এখন দুষ্ট হয়েছে। তাই ফের তাঁদের চিঠি পাঠিয়ে বিধানসভায় হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন অধ্যক্ষ। এমনটাই বিধানসভার সচিবালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।