নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ার পরেও বিজেপি বাংলার বুকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের তকমা পেয়ে গিয়েছিল। সেই সঙ্গে পেয়েছিল রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার পদও। কিন্তু তারপর থেকে সময় যতই এগিয়েছে বাংলার রাজনীতি থেকে বিজেপির পিছু হটা যেন তত বেশি করে নিত্যদিন প্রকট হতে শুরু করেছে। নিত্যদিনই এখানে দল ছাড়ছেন সাধারন কর্মী থেকে নেতা মায় বিধায়ক-সাংসদরাও। তারপরেও চেতনা হচ্ছে না গেরুয়া শিবিরের নেতাদের। তাঁদের বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষী মনোভাব তো রয়েই গিয়েছে, নানা পদক্ষেপে তা সামনেও চলে আসছে। এদিন যখন বাংলার তিন বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফল সামনে এল তখন দেখা গেল বিজেপি শুধুই পিছু হটেনি, তাঁরা ভোটও হারিয়েছে বাংলার মানুষের। দিলীপ ঘোষকে দলের রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সুকান্ত মজুমদারকে এনে যে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল যে দল ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, বাস্তবে তার কোনও নিদর্শনই এদিন চোখে পড়েনি। তিন কেন্দ্র থেকেই কার্যত ওয়াশআউট হয়ে গিয়েছে গেরুয়া বাহিনী। সামসেরগঞ্জে তো তাঁরা আবার ৩ নম্বরে।
এই ফলাফলই বলে দিচ্ছে বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা এখন যে দ্রুত গতিতে কমছে তাতে করে আগামী দিনে পদ্মশিবির ছেড়ে নেতাকর্মী বা সাংসদ বিধায়কদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেখতে পাওয়া যাবে। এমনটাই অভিমত ওয়াকিবহাল মহলের। সব থেকে বড় কথা সামনেই ৩০ অক্টোবর রাজ্যের আরও ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হতে চলেছে। এদিনের ফলাফল তাতে যে ভালো রকমের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এই ৪ কেন্দ্রের মধ্যে দিনহাটা ও শান্তিপুরে বিজেপি একুশের ভোটে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু আগামী ৩০ তারিখের ভোটে বিজেপি এই দুই আসনে আর জয়ের মুখ দেখতে পারবে কিনা সন্দেহ। তাঁদের ৭৭ আসন প্রাপ্তির বহর যে দ্রুত গতিতে কমতে শুরু করেছে তাতে আগামী দিনে তাঁরা রাজ্যসভার আসনে কাউকে বাংলা থেকে জিতিয়ে দিল্লি পাঠাতে পারবে কিনা সন্দেহ। সেই সঙ্গে দলে থাকা বাকি বিধায়কদেরও ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
এদিনের ফলাফল রাজ্য বিজেপির অন্দরেও ভিন রাজ্যের বিশেষ করে হিন্দিভাষী নেতাদের দাপট নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মমতাঁর বিরুদ্ধে হিন্দিভাষী প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করে বিজেপি চেয়েছিল ভবানীপুরের হিন্দিভাষীদের ভোট নিজেদের দিকে টানতে। কিন্তু ভোটের ফল বলে দিচ্ছে একুশের ভোটেও যে দুই ওয়ার্ডে বিজেপি লিড পেয়েছিল সেখানে এবারে লিড পেয়েছেন মমতা। অর্থাৎ হিন্দিভাষী অবাঙ্গালিরাও মুখ ফিরিয়েছে বিজেপির দিক থেকে। একই সঙ্গে দলে শুভেন্দুর কার্যকলাপ দলকে যে কোনও লাভের মুখও দেখাতে পারছে না সেই বিষয়েও এখন প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বঙ্গ বিজেপির অনেক নেতাই এখন মনে করছেন শুভেন্দু কেন্দ্রিক দলে পরিণত হয়েছে বাংলার বিজেপি। যা দলকে আরও দুরাবস্থার মুখে ফেলে দিচ্ছে। শুভেন্দু ব্যক্তিগত কারনে যে মমতা ও তৃণমূল বিরোধীতা চালিয়ে যাচ্ছেন তা বিজেপির কোনও উপকার সাধনই করতে পারছে না। বরঞ্চ দলে বিরোধ বাড়াচ্ছে, উপদলের সৃষ্টি করছে। তাই এই অংশটি মনে করেন শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া উচিত। সেই জায়গায় দলের রাশভারী কাউকে বিরোধী দলনেতার পদ দেওয়া প্রয়োজন। নাহলে দল বাংলা থেকে ধুয়ে মুছে সাফ হতে বেশি সময় নেবে না।