-273ºc,
Friday, 2nd June, 2023 4:33 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: একের পর এক নির্দেশ ধেয়ে আসছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে। আর সেই সব নির্দেশ পালন করতে কার্যত নাভিশ্বাস উঠছে বঙ্গ বিজেপি(Bengal BJP) নেতৃত্বের। সামনেই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন(Panchayat Election)। সেই নির্বাচনে প্রার্থী(Candidate) হওয়া নিয়ে নতুন করে এক নির্দেশ জারী করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বুথ(Booth) প্রতি প্রার্থীর নাম এবার থেকে আর নিজেরা ঠিক করতে পারবেন না বঙ্গ বিজেপির নেতারা। নাম আসবে নীচুতলা থেকে। সেই নাম জেলা নেতৃত্বকে পাঠাবে দলের মণ্ডল স্তরের নেতারা। এই পর্যন্ত হলেও ঠিক ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাফ নির্দেশ, প্রতিটি বুথ থেকে নূন্যতম ৩ জনের নাম পাঠাতে হবে প্রার্থী হওয়ার জন্য। আর এই নির্দেশটা মানতেই এখন নাভিশ্বাস উঠছে বাংলার বুকে রাজ্য নেতৃত্ব থেকে জেলা নেতৃত্ব মায় মণ্ডলস্তরের নেতাদেরও। কেননা বাংলার বহু বুথে বিজেপির ১জন সদস্যও নেই। সেখানে প্রতি বুথ থেকে কীভাবে ৩টি করে নাম পাঠানো যাবে তা নিয়েই মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের।
আরও পড়ুন Land Records-এ ভুল, ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ২৫২টি অভিযোগ নবান্নে
হঠাৎ করে এই নির্দেশ কেন পাঠালেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? বিভিন্ন সময়ে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার(Sukanta Majumdar), বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা(Suvendu Adhikari) দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তো বটেই প্রকাশ্যেও দাবি করেছেন বাংলার বুকে নাকি বিজেপির প্রচুর কর্মী রয়েছেন, সমর্থক রয়েছেন। মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারলেই নাকি বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) গদি উল্টে যাবে। সেই সঙ্গে বলেছেন, রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিটি বুথে যোগ্য প্রার্থী দিতে দলের কোনও সমস্যাই হবে না। নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ এবং নিরপেক্ষ হয়, তাহলে পঞ্চায়েত ভোটেও যথেষ্ট ভালো ফল করবে গেরুয়া শিবির। যদিও এই সব দাবি ঘিরে বঙ্গ বিজেপির অন্দরেই বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। মনে করা হচ্ছে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের ওই সব দাবিদাওয়া শুনে দলেরই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁদের পাল্টা চাপে ফেলে দিয়েছেন। সেই কারণেই তাঁরা বুথ প্রতি ৩ জনের নাম পাঠাতে বলেছেন। কেননা এই নির্দেশ পালন হচ্ছে কীভাবে সেটা দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে বাংলায় জেলায় জেলায়, ব্লকে ব্লকে, বুথে বুথে বিজেপির সংগঠন ঠিক কোন অবস্থায় রয়েছে।
আরও পড়ুন ‘কথায় কথায় কারও চাকরি খাবেন না’, হলফনামা দুপুর ১টার মধ্যে
যদিও বঙ্গ বিজেপিরই নেতাদের একতা বড় অংশের দাবি, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে গো হারার পরে রাজ্যজুড়েই দলের সংগঠনে ধস নেমেছে। যা অবস্থা তাতে সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের সব বুথে বিজেপি আদৌ আসন ধরে ধরে প্রার্থী দেওয়া তো দূরের কথা, অর্ধেক আসনেও প্রার্থী দাঁড় করাতে পারবে কিনা সন্দেহ। বহু জায়গাতেই গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর থেকে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী তুলে আনা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে দলের কর্মীমহলেই সন্দেহ রয়েছে বিস্তর। বিজেপি এখন জেলায় জেলায় বুথ সশক্তিকরণ অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু, তৃণমূল(TMC) কংগ্রেস রাজ্যের জেলার বহু জায়গায় বুথ সম্মেলন শেষ করার পাশাপাশি ব্লকস্তর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থীদের নাম তুলে এনেছে। সেখানে বিজেপি বুথস্তরের নাম তুলে আনা তো দূর, জেলা স্তরের নামও চূড়ান্ত করতে পারেনি। যদিও বঙ্গ বিজেপির নেতাদের দাবি, সব কিছুই তাঁদের সাংগঠনিক পদ্ধতি অনুসারেই এগচ্ছে। সঠিক সময়ে প্রার্থীদের নাম উঠে আসবে। সব আসনেই তাঁরা প্রার্থী দেবেন। তাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। যখনই নির্বাচন হবে, তখনই তাঁরা প্রার্থী ঘোষণা করে দেবেন। বুথ থেকেই প্রার্থীর নাম আসবে।
আরও পড়ুন ১২ হাজার নিয়োগে আমরা কয়জন চাকরি পাব, প্রশ্ন আন্দোলনকারীদের
যদিও দলের আদি নেতাদের দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু জায়গায় বিজেপি প্রার্থীই খুঁজে পাবে না। একএকটি অঞ্চলে দুই-তিনটি জায়গায় বিজেপির সংগঠন আছে। সেখানে বড্ডজোর লড়াই হবে। বাকি জায়গায় বিজেপি নামকেওয়াস্তে প্রার্থী দেবে। মার্চ মাসজুড়ে দলের বুথ সশক্তিকরণ অভিযান চলবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমেই বিজেপি কার্যত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নামতে চাইছে। কিন্তু, দলের বহু পুরনো কর্মী এখনও সেভাবে মাঠেই নামেননি। তাঁরা কার্যত বসে রয়েছেন। এরফলে বুথস্তর থেকে শুরু করে মণ্ডল ও জেলাস্তরেও কার্যত একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূল জেলায় জেলায় দিদি দূত, দিদি সুরক্ষা কবচ, অঞ্চলে একদিন সহ একাধিক কর্মসূচি চালাচ্ছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একেবারে গ্রামস্তরে পৌঁছে নিয়মিত জনসংযোগ কর্মসূচি চালাচ্ছে। কিন্তু, সেই নিরিখে বিজেপিকে সেভাবে মাঠে ময়দানে দেখাই যাচ্ছে না। এমনকি রাজ্যে যে সব বিধানসভা ও লোকসভা আসন বিজেপির হাতে রয়েছে, সেখানে তো দলের রমরমা থাকার কথা। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে সেটাও কার্যত অদৃশ্য। রাজ্য থেকে জেলা, মণ্ডল থেকে আঞ্চলিক পার্টি অফিসে আগে যেভাবে দলীয় কর্মী সমর্থকদের ভিড়ে গমগম করত, এখন সেই চিত্রও যেন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সব মিলিয়ে বঙ্গ বিজেপি অনেকটাই ব্যাকফুটে।