নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলা(Bengal) দখলের পাশাপাশি বাংলাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করার ফন্দি এঁটেছিলেন পদ্মপার্টির নেতারা। কেউ চাইছিলেন গোর্খাল্যান্ড, কেউ চাইছিলেন কামতাপুর, কেউ পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য, কেউ জঙ্গলমহল রাজ্য কেউ বা রাঢ়ভূম। সেই সঙ্গে উঠেছিল শ্লোগান, ‘আবকে বার ২০০ পার’। কিন্তু বাংলার মানুষ পদ্মপার্টির নেতাদের বাংলা দখলের ছক আটকে দিয়েছিলেন। আর বাংলা ভাগের ষড়যন্ত্র আটকে দিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস(RSS)। তাই পদ্মপার্টির নেতাদের কুকীর্তির হাত থেকে বাংলা আপাতত কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থেকে গেল। কিন্তু যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ(Uttar Pradesh) আর মহারাষ্ট্রের(Maharashtra) ক্ষেত্রে তা সম্ভবত আর হচ্ছে না। কেননা বিজেপি(BJP) সূত্রে জানা গিয়েছে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের আগেই মোদি সরকার(Modi Government) এই দুই রাজ্যকেই ভেঙে দুটি পৃথক রাজ্য গড়ার পরিকল্পনা করছেন। বাংলা ভাগের চিন্তাভাবনা আপাতত তাঁদের অভিলাষায় নেই।
আরও পড়ুন সামনেই জি-২০ সম্মেলন, সেজে উঠছে কল্লোলিনী কলকাতা
ছোট ছোট রাজ্য হলে উন্নয়ন তরান্বিত হয়। সেই সঙ্গে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে সেই সব রাজ্যের নেতাদের প্রভাব প্রতিপত্তিও অনেকটা কমে যায়। ফলে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে ওই রাজ্যগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যেমন অনেকটাই সহজ হয়ে পড়ে তেমনি ওই রাজ্যগুলির সরকারও কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। ফলে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় কোনও দল রাজ্যগুলিতে মাথা তুলতে পারে না। তাঁদের বিরোধিতাও করতে পারে না। ফলে রাজ্যগুলিকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে নিজেদের ইচ্ছা মতো চালাতে পারে কেন্দ্র সরকার ও সেখানকার ক্ষমতাসীন দল। পাশাপাশি এই ব্যবস্থায় দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সাংবিধানিক ভাবে বজায় থাকলেও সম্পূর্ণ ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে চলে আসে। রাজ্যগুলি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। তাই এইসব রাজনৈতিক সুবিধার কথা ভেবে বিজেপি দীর্ঘকাল ধরে ছোট রাজ্যের পক্ষে। তেলেঙ্গানা ছাড়া বিগত দুই দশকে সবক’টি ছোট রাজ্য গঠন হয়েছে এনডিএ’র শাসনকালে। উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড এই ৩ রাজ্যের জন্মই হয়েছে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির আমলে। মোদি জমানায় অবশ্য নতুন কোনও রাজ্যের জন্ম হয়নি। তবে জম্মু কাশ্মীরকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৩ ভাগে। সেই হিসাবে ৩টি নতুন রাজ্য তৈরি হয়েছে এটা বলতেই হয়।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাংলায় ভোটার বাড়ল ১৩ লক্ষ ৩৪ হাজার
দেখা যাচ্ছে, দেশের ছোট ছোট রাজ্যে বিজেপির রাজনৈতিক সাফল্য সর্বদাই বেশি। ক্ষমতাচ্যুত হলেও আবারও তাঁরা দ্রুত ফিরে এসেছে ক্ষমতায়। পাশাপাশি নতুন রাজ্য গড়ে দেওয়ার সুবাদে সেই সব রাজ্যের মানুষের কিছুটা হলেও বাড়তি সমর্থন পাচ্ছে বিজেপি। সেই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, এমনকী তেলেঙ্গানাতেও আঞ্চলিক দলগুলি অপেক্ষা বিজেপির জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বেশি করে বাড়ছে। ধাক্কা খাচ্ছে সেখানে কংগ্রেসও। সেই ফর্মুলা মেনেই বাংলাকে টুকরো টুকরো করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হচ্ছে দেখে সঙ্ঘের তরফেই বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আর বঙ্গভঙ্গ নিয়ে কেউ যেন টুঁ শব্দটিও না করে। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে বাংলাকে নিয়ে বাঙালির যা আবেগ তা উত্তরপ্রদেশকে নিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের নেই। কেননা তাঁরা শুধু গোবলয়টাকেই চেনেন। আলাদা করে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশের ভাবনায় তাঁরা নিজেদের জড়িয়ে রাখেন না। তাই যোগী রাজ্য ভেঙে ৩ টুকরো হলেও তাঁদের কিছু যায় আসবে না। সেটা বুঝেই এবার ২০২৪ এর আগে যোগীরাজ্য ভেঙে ৩টি পৃথক রাজ্য গড়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে পদ্মশিবিরের অন্দরে। ভাঙা হবে মহারাষ্ট্রও।
আরও পড়ুন জবকার্ড থেকেও কাজ পাচ্ছেন না, চিন্তা করবেন না, কাজ দেবে স্বাস্থ্য দফতর
তাছাড়া যোগীরাজ্য ও মহারাষ্ট্র দুটি ক্ষেত্রেই রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। সংবিধান অনুযায়ী, নতুন রাজ্য গঠনেরর ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের চুড়ান্ত অনুমোদনের কোনও প্রয়োজন নেই। সংবিধানের ২, ৩ এবং ৪ নং ধারা অনুযায়ী নতুন রাজ্য গঠন করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে কেন্দ্র সরকারের। একটি রাজ্য বিভাজিত করার জন্য সংসদে প্রস্তাব পাশ করাতে হয়। তারপর সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়। বিধানসভার মতামতের জন্য সেই প্রস্তাব রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্য বিধানসভায় পাঠান। বিধানসভায় ভোটাভুটিতে যদি ওই প্রস্তাবের বিপক্ষেও সিংহভাগ মতপ্রদান করেন, তাহলেও নতুন রাজ্য গঠন আটকায় না। তাই উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র দুটি রাজ্য ভেঙে পৃথক ২টি বা ৩টি কিংবা ৪টি নতুন রাজ্য গঠনের কাজে সমস্যায় পড়তে হবে না মোদি সরকারকে। খালি বাংলার ক্ষেত্রে তাঁদের পথে বড় কাঁটা বাংলাকে ঘিরে থাকা বাঙ্গালির আবেগ ও অবশ্যই বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা তথা আমজনতার ওপর তাঁর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ। সেই হিসাবে বলতে গেলে মমতার উপস্থিতি আর সঙ্ঘের চাপ এই দুটিই বাংলাকে এবারের মতো বাঁচিয়ে দিল। যদিও পাহাড়ের পৃথক গোর্খাল্যান্ড এখনও বিজেপির আস্তিনের তলায় লোকানো থাকছে।