নিজস্ব প্রতিনিধি: শীতবিলাসী বাঙালির খাদ্যবিলাসিতা বেড়ে যায় ঠাণ্ডা পড়লেই। তাই বাঙালিরা যেমন পুজোর জন্য সারা বছর হাপিত্যেশ করে অপেক্ষা করেন তেমনি তাঁরা অপেক্ষা করেন শীতের জন্যও। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই সেই শীত কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে বাংলা(Bengal) থেকে। তা সে কলকাতা হোক কী গ্রাম বাংলা। রাজ্যের পশ্চিমের গুটিকয় জেলা এবং উত্তরবঙ্গের গুটিকয় জেলা বাদে গত কয়েক বছর ধরে ঠাণ্ডার পূর্ণতা খুঁজেই পাচ্ছেন না বঙ্গবাসী। হালকা লেপ আর সোয়েটারেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে শীতের দাপট। চলতি বছরেও যে সেই শীত খুব একটা আশা জাগিয়ে আসছে না সেটা এবার পরিষ্কার করে দিলেন আবহাওয়াবিদরাই। সাফ জানিয়ে দিলেন, বঙ্গোপসাগরের(Bay of Bengal) জল ক্রমশ উষ্ণ হয়ে চলেছে। আর তার জেরেই একের পর এক নিম্নচাপ(Low Depression) তৈরির সম্ভাবনাও থাকছে। অর্থাৎ গত বছরের মতোই এবারেও বাঙালির শীতে(Winter) কাঁটা হবে বৃষ্টি। হয় নিম্নচাপ নয়ত পশ্চিমী ঝঞ্ঝা(Western Disturbance), এই দুইয়ের দাপটেই ঠাণ্ডাহীন শীত কাটবে বাঙালির।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের দাবি, আগামী সপ্তাহে, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলেও তার থেকে ঘূর্ণিঝড়ের কোনও আশঙ্কা নেই। বড্ড জোর দার্জিলিং সহ পার্বত্য জেলাগুলিতে ৭ ও ৮ তারিখ নাগাদ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতা(Kolkata) শহরে আকাশ কিন্তু একেবারে পরিষ্কার থাকবে। তবে অনুমান এই ঘূর্ণাবর্তের জেরে পূর্ব ভারতে শীত আগমনের পথে ধাক্কা খাবে। একটা সময় ছিল যখন মা দুর্গা জলে পড়লেই গা শির শির করত। কালিপুজোয় রীতিমত গায়ে চাদর-সোয়েটারও চড়াতে হত জেলায় জেলায়। সেই ছবি ক্রমশ বদলাচ্ছে। কালিপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো কেটে গেলেও ঘরে ঘরে পূর্ণ দমে ঘুরছে পাখা। বন্ধ হয়নি এসিও। তারই মাঝে আশা জেগেছিল, চলতি বছরে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বঙ্গে শীত পড়বে। কিন্তু সেই পথেই এখন কাঁটা। নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণাবর্ত, সঙ্গে দোসর পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। ঠাণ্ডা তাই বহু দূর অস্ত।
আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী শনি সকালে কলকাতা শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি কম। বাতাসে রাতের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৪৫ শতাংশ। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে সকালে ও রাতে হালকা শীতের আমেজ অনুভব করা যাচ্ছে। কিন্তু এটা আমেজ মাত্র, শীত নয়। কেননা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গায়ে মোটা জামাকাপড় রাখা দায় হয়ে পড়ছে। বাড়ির বাইরে পা রাখলেই মনে হচ্ছে মাথার ওপর আগুন জ্বলছে। আবহাওয়াবিদদের দাবি, বাংলায় শীত আসতে পারে ডিসেম্বরের শেষ দিকে। তবে হাড় কাঁপানি ঠাণ্ডা নাও মিলতে পারে। বরঞ্চ ঝরবে বৃষ্টি। তাতেই ধাক্কা খাবে শীতের ঠাণ্ডা। আমেজ মিললেও শীত এবারেও কার্যত অধরা থাকবে বাঙালির কাছে।