নিজস্ব প্রতিনিধি: ইট মারলে যে পাটকেলও ধেয়ে আসে সেটা বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন বাংলার একশ্রেনীর রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা(West Bengal State Government Employees)। আসি যাই মাইনে পাই, এই মনোভাব নিয়ে তাঁরা যখন খুশি অফিসে আসতেন, যখন খুশি বেরিয়ে যেতেন। কেউ কেউ তো ৪ ঘণ্টাও অফিসে থাকতেন না। এই ছবি বাম জমানার(Leftfront Government)। আর এই প্রসঙ্গে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে শোনা গিয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর(Jyoti Basu) বিখ্যাত এক উক্তি, ‘কাকে কাজ করতে বলবো? চেয়ারকে?’। পরিবর্তনের পরে অবশ্য সেই ছবি অনেকটাই বদলে দিতে সক্ষম হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। কর্মীদের নিত্যদিন সঠিক সময়ে হাজিরা থেকে কাজ করানোর দিকে তিনি জোর দিয়েছিলেন বেশ কড়া ভাবেই। তার জেরে রাজ্যের সরকারি কার্যালয়গুলিতে হারিয়ে যাওয়া কর্মসংস্কৃতি আবারও ফিরে এসেছে। কিন্তু এখন নতুন করে সেই কর্মসংস্কৃতি যে ব্যাঘাত ঘটেছে DA আন্দোলনের জেরে সেটাও মুখ্যমন্ত্রীর নজর এড়িয়ে যায়নি। সেই সূত্রেই এবার রাজ্যের সমস্ত সরকারি অফিসে Biometric Attendence বাধ্যতামূলক করে দিতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
আরও পড়ুন হকার পিছু ভাড়া ২০০০ টাকা, সিদ্ধান্ত ফিরহাদের KMC’র
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, DA আন্দোলনের জেরে বাংলার বুকে কলকাতা থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় রাজ্য সরকারি অফিসগুলিতে কর্মীদের হাজিরা আর আগের মতো নেই বলে নবান্নে খবর এসে পৌঁছছে। প্রথমে প্রথমে মনে করা হচ্ছিল, যারা হাজিরা ঠিক মতন দিচ্ছেন না তাঁরা হয়তো ছুটিতে আছেন বা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু পরে দেখা যায় তাঁরা না ছুটিতে আছেন না আন্দোলনের যোগ দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনের নামে তাঁরা নিজেরা নিজেদের খুশি মতন অফিসে আসছেন যাচ্ছেন। যেটুকু সময় অফিসে থাকছেন সেটুকু সময়েও ঠিক মতন কাজ করছেন না। এর পাশাপাশি আন্দোলনে যোগ দেওয়া কর্মীরাও আছেন। তাঁরাও একইরকম ঘটনা ঘটাচ্ছেন দিনের পর দিন। আর তাতেই রাজ্যের সরকারি অফিসে কর্মসংস্কৃতির ওপর বেশ বড়সড় ধাক্কা লেগেছে। সেই খবর মুখ্যমন্ত্রীর কানেও গিয়েছে। ঘটনাচক্রে এদিন থেকেই আবার আন্দোলনকারীরা Digital Strike শুরু করছেন। অর্থাৎ এদিন থেকে তাঁরা Office Time এর বাইরে ব্যক্তিগত সময়ে ব্যক্তিগত Mobila, Desktop, Laptop ব্যবহার করে Online-এ Social Media বা সরকারি Portal-এ কোনও কাজ করবেন না।
আরও পড়ুন নতুন জাতীয় সড়ক পাচ্ছে কেষ্ট’র জেলা, ৫২ কিমির NH 114
আর এদিনই এইসব কিছু দেখে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার থেকে বাংলায় রাজ্য সরকারের সমস্ত অফিসে, দফতরে, কার্যালয়ে Biometric Attendence বাধ্যতামূলক। এমনকি জেলায় জেলায় প্রশাসনিক অফিসগুলিতেও এই নিয়ম লাগু হবে। প্রতিটি জেলার মুখ্য প্রশাসনিক কার্যালয়, মহকুমা কার্যালয় ও ব্লক অফিসেও এই নিয়ম কার্যকর হবেন। এই নির্দেশের আওতায় রাজ্যের সব গ্রেডের সকল কর্মচারীরা যেমন থাকবেন তেমনি থাকবেন রাজ্যের সব WBCS ও IAS আধিকারিকেরাও এবং আমলারাও। নবান্ন থেকে তেমনই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এই নিয়ম আগে চালু হলেও বহু ক্ষেত্রেই এখনও কর্মীদের হাজিরা জন্য রেজিস্টার খাতা ব্যবহার করা হয়। একইসঙ্গে ১০টার মধ্যে ঢোকা এবং ৫টা পর্যন্ত অফিস করা নিয়ে নতুন করে নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের আইন দফতর। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন দফতরে Surprise Visit-এ গিয়েছিলেন। সেই সব পরিদর্শনে তিনি অনেক জায়গাতেই চেয়ার খালি থাকতে দেখেছেন। তার পরে পরেই Biometric Attendence বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের পিছনে যে DA আন্দোলনকারীদেরও প্রচ্ছন্ন বার্তা দেওয়া হয়েছে সেটাও তাঁরা মনে করছেন।