নিজস্ব প্রতিনিধি: উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে ১৮টা আসন জিতে বিজেপির হর্তা কর্তা বিধাতারা ভেবে নিয়েছিলেন, বাংলা আর তার নিজের মেয়েকে চায় না। সেই ভুল তাঁদের ভাঙল একুশের বিধানসভা নির্বাচনের শেষে। এখন তাঁদের মাথায় চেপেছে একটাই চিন্তা, কীভাবে চব্বিশের ভোটে এই ১৮টা আসন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে। কেননা সঙ্ঘ হোক বা বেসরকারি সংস্থা, প্রায় সবার সমীক্ষাতেই ধরা পড়েছে উদ্বেগ চিত্র। চব্বিশে বাংলা থেকে শূন্যও হয়ে যেতে পারে বিজেপি। আর তাই এখন শুরু হয়েছে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা। উনিশের ভোটে বিজেপির সহায়ক হয়েছিল যে ২-৩টি ভোট ব্যাঙ্ক তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল মতুয়ারা(Matuya)। সেই মতুয়া সম্প্রদায় যে বিজেপি(BJP) থেকে মুখ ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছে তার আভাস মিলতে শুরু করে দিয়েছে সাম্প্রতিককালে হয়ে যাওয়া পুরনির্বাচন থেকেই। আর গতকাল একুশে জুলাইয়ে(21 July) তৃণমূলের(TMC) সভায় মতুয়াদের জনস্রোতের যে ছবি ধরা পড়েছে তা কার্যত বিজেপিকে আরও উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
উনিশের ভোটে মতুয়াদের সমর্থনের জোরেই বিজেপি বনগাঁ, রানাঘাট, উত্তর মালদা, কোচবিহার, বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরের মতো আসনে জয়ী হয়েছিল। সেই জয়ের ধারা অব্যাহত ছিল একুশের বিধানসভা ভোটেও। তার জেরেই ওই সব লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা বেশির ভাগ বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছে বিজেপি। কিন্তু একুশের সেই ভোটের পরেই দেখা গেল পুরসভা নির্বাচনে ওই সব এলাকাতে একটি পুরসভাতেও জিততে পারেনি গেরুয়া শিবির। কিছু কিছু জায়গায় তো তাঁরা খাতাও খুলতে পারেনি। এতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল বঙ্গ বিজেপিতে। সেই উদ্বেগ কার্যত আরও বাড়িয়ে দিয়েছে একুশে জুলাইয়ে তৃণমূলের সমাবেশ মতুয়াদের ঢলের ছবি। গতকাল বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের(Mamatabala Thakur) নেতৃত্বে মতুয়াদের একটি বিশাল দল একুশের সভায় যোগ দিয়েছিল। আর এই ভিড়ই কার্যত রাতের ঘুম কেড়েছে বিজেপির। গতকাল বনগাঁ, গোবরভাঙা, ঠাকুরনগর, হাবড়া, অশোকনগর থেকে শুরু করে রানাঘাট, কল্যাণী, চাকদহ, হাঁসখালি, হরিণঘাটা এলাকা থেকে মতুয়ারা এসেছিলেন দলে দলে তৃণমূলের সমাবেশ। হাতে ছিল ঢাক, ঢোল, কাঁসর, করতাল, খঞ্জনি। সঙ্গে চলেছিল এই সব বাদ্য সহযোগে নাচ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন মতুয়ারা আবারও তৃণমূলমুখী? একুশের সভায় আসা মতুয়াদের দাবি, ‘বিজেপি হচ্ছে মিথ্যাবাদী। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা মিথ্যা কথা বলেছিলেন। নাগরিকত্ব, এনআরসি লাগুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের কাছে টেনেছিলেন। এখন মিথ্যা টের পেয়েছি। কিন্তু দিদি কথা রেখেছেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাচ্ছি। তাই গত পুরভোটে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছি। মমতা যা বলেন তা করেন। সেই কথা তিনি পালন করেন। তাই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতেই আমরা সভায় এসেছি।’