নিজস্ব প্রতিনিধি: কিছুদিন আগেই বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় একটি টুইট করেছিলেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে বাংলায় বিজেপি ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে এগোচ্ছে। সেই টুইট নিয়ে গেরুয়া শিবিরে অস্বস্তি ছড়ালেও এখন কিন্তু অনেকেই মনে করছেন তথাগত খুব একটা ভুল কথা বলেননি। কলকাতার পুরনির্বাচনের ফলাফলে বাম উত্থান আর বিজেপির পিছু হঠা কার্যত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে পদ্মশিবির বাংলায় ক্রমশ এক প্রান্তিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে চলেছে। এখন সেই অনুমানকে কার্যত আরও পাকাপোক্ত করে দিচ্ছে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে শুরু হওয়া মুষলপর্ব। কলকাতার পুরনির্বাচনের পরে রাজ্য বিজেপি দলের সাংগঠনিক পদগুলিতে নানা পরিবর্তন করতে শুরু করে দিয়েছে। তার জেরে সায়ন্তন বসুর মতো নেতা দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন। শনিবার দলের সাংগঠনিক জেলাগুলির নতুন সভাপতিদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরেই এদিন দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে দিলেন ৫জন বিধায়কের পাশাপাশি হেভিওয়েট নেতারাও।
শনিবার বড়দিনের দিনেই বিজেপিকে ধাক্কা দিয়ে যে ৫ বিধায়ক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন তাঁরা হলেন রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী, হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম কুমার সরকার, বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া, গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর ও কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে গ্রুপ ছেড়েছেন শীলভদ্র দত্ত, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রকাশ্যে এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপির ওই বিধায়ক ও নেতারা কিছু না বললেও সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য কমিটিতে মতুয়া প্রতিনিধি না থাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমা এবং নদিয়া জেলার কল্যাণী ও রানাঘাট মহকুমা এলাকায়। সেই ক্ষোভের কারনেই দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছেন এই ৫ বিধায়ক। আবার শীলভদ্র দত্ত, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা গ্রুপ ছেড়েছেন ভাল পদ না পাওয়ার কারনে। সূত্রের দাবি, এই ক্ষোভের কারনে নেতা ও বিধায়কদের দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ার ঘটনা কার্যত হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আগামী দিনে এই ঘটনা আরও বেশি করে দেখা যাবে।
বঙ্গ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির বিধায়ক থেকে নেতাদের একটা বড় অংশের ক্ষোভ শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে। তাঁদের দাবি, শুভেন্দু অধিকারী কার্যত বঙ্গ বিজেপিকে নিজের তাঁবেদার দল বানিয়ে ফেলেছেন। তিনি অন্য কারোর কথা শুনতে চান না, কাউকে কিছু বলতে দিতেও চান না। উনি যা বলবেন বা করবেন সেটাকেই মুখ বুজে সবাইকে মেনে নিতে হচ্ছে। যে মুখ খুলছে দল তাঁরই বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে। শুভেন্দু যাকে যে পদের জন্য অনুমোদন করছেন তাঁকে সেই পদেই বসিয়ে দিচ্ছে দলের রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কার্যত গোটা দলটিই এখন শুভেন্দু অধিকারীর ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। মান সম্মান নিয়ে দলের কাজ করা যাচ্ছে না, দলে থাকা যাচ্ছে না। এখন যারা দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়ছেন তাঁরা যদি অদূর ভবিষ্যতে তৃণমূলে যোগদানও করেন তাহলেও অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না। ক্ষোভ রয়েছে দলের বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে নিয়েও। কার্যত তাঁর ব্যক্তিত্বহীন কার্যকলাপ দলের নেতা কর্মীদের আরও বেশি করে আঘাত দিচ্ছে। দলকে ক্রমশই খাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি। দিলীপ ঘোষ আর শুভেন্দু অধিকারী যা বলছেন তিনি শুধু সেটুকুই মুখ বুজে পালন করে চলেছেন। ফলে দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ অভিযোগ তাঁর কানেও যাচ্ছে না গেলে তিনি শুনছেনও না। সব মিলিয়ে সেই তথাগত রায়ের ভবিষ্যতবাণীই সত্যি হয়ে যেতে বসেছে।