নিজস্ব প্রতিনিধি: অপেক্ষা শেষ। বুধবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ(Nirmala Sitaraman) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের অর্থ বাজেট(General Budget) পেশ করেছেন সংসদের নিম্নকক্ষে, অর্থাৎ লোকসভায়। এই বাজেট মোদি জমানার দ্বিতীয় দফার শেষ পূর্ণাঙ্গ অর্থবাজেট। তাই এই বাজেট ঘিরে অনেক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। বাজেট শেষে প্রধানমন্ত্রী থেকে বিজেপির(BJP) ছোট, মেজ, বড় নেতারা উচ্চকন্ঠে প্রশংসা করেছেন। যদিও বিরোধীরা এই বাজেটকে তীব্র সমালোচনা করছেন। কিন্তু মজার কথা হচ্ছে, গেরুয়া শিবিরের নেতারা যারা মিডিয়ার সামনে, ক্যামেরার সামনে, আমজনতার সামনে বাজেটের উচ্চকন্ঠে প্রশংসা করছেন তাঁরাই কিন্তু চার দেওয়ার ভিতরে আমজনতার গণরোষের আশঙ্কা করছেন। এই বাজেট গেরুয়া বাহিনীকে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করাতে পারবে কিনা তা নিয়েও আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন।
আরও পড়ুন মধ্যবিত্তের ভোটব্যাঙ্ক মাথায় রেখে বাজেট নির্মলার
নির্মলা এদিন বাজেট পেশকালে দেশের অর্থনীতি নিয়ে বেশ ভাল ভাল কথা বলেছেন। যেমন, ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০১৪ থেকে আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ডিজিটাল কারেন্সিতেও আমরা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছি। বাজেটে কৃষকদের কল্যাণ ও গ্রিন এনার্জিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে ঋণের মাত্রা ২০ লক্ষ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাস যোজনায় ৬৬% বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পরিকাঠামো উন্নয়নে ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার ৩৩% বাড়িয়ে ১০ লক্ষ কোটি টাকা করা হবে। রাজ্যগুলিকে ৫০ বছরের জন্য সুদহীন ঋণ দেওয়া হবে। পরিষেবার উন্নতিতে পাশ হবে জন বিশ্বাস বিল। ২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি রেলে বিনিয়োগ করা হবে। ৫০টি বিমানবন্দরের আধুনীকিকরণ হবে। এই বছর ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭% অনুমান করা হচ্ছে। ইপিএফও গ্রাহক সংখ্যা ২৭ কোটি ছুঁয়েছে। দেশে ১৫৭টি নার্সিং কলেজ চালু করা হবে। পিছিয়ে পড়া জনজাতিগুলির উন্নয়নে বিশেষ তহবিল গড়ে তোলা হবে। ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণকে শূন্য করার প্রচেষ্টা করা হবে। ৫০টি বিমানবন্দরের আধুনীকিকরণ হবে। কেওয়াইসি ও পরিচয়পত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হবে। সরকারি পুরোনো গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স বাতিল করা হবে। নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রণাম প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ। ট্যুরিজমের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হবে। পড়ুয়াদের জন্য জাতীয় ডিজিটাল গ্রন্থাগার গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় আবাসিক বিদ্যালয় গুলিতে ৩৮ হাজার ৮০০ শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এতকিছু বলেছেন নির্মলা।
আরও পড়ুন মোদির কাছে ‘মধ্যবিত্তের মনস্কামনা পূরণের বাজেট’, মমতার কাছে ‘অমাবস্যার অন্ধকার’
কিন্তু গেরুয়া শিবিরকে যেটা ভাবাচ্ছে সেটা হচ্ছে, এই বাজেট কী কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে? আমজনতাকে বাড়তি আয়ের মুখ দেখাতে পারবে? কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে? গ্রামীণ ভারতের মানুষদের কী বাড়তি কাজ দেখাতে পারবে? রান্নার গ্যাস থেকে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমাতে পারবে? চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, শাকসবজির দাম কী কমাতে পারবে? কিন্তু এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর না তাঁদের কাছে আছে না তাঁদের কাছে তা কেউ তুলে ধরতে পারছে। কার্যত অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তিগুলি নিয়ে আশার কোনও আলোই দেখা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার বাজেট পেশের প্রাক্কালে মোদি সরকার প্রকাশিত আর্থিক সমীক্ষায় পরোক্ষে মন্দারই হাতছানি ধরা পড়েছিল। এদিন সেই মন্দার ছায়া থেকে কিন্তু বার হতে পারেনি নির্মলার বাজেট। কার্যত মন্দার মোকাবিলা করার মতো তিনি কিছুই ঘোষণা করেননি। তাঁর বাজেটে লাভবান হবেন একমাত্র শহুরে উচ্চশিক্ষিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবী, একশ্রেনীর ব্যবসায়ী এবং একশ্রেনীর বয়স্করা। কিন্তু তার বাইরে দেশের যে আপামর মানুষজন পড়ে থাকেন যার অংশটা কার্যত প্রায় ৭০ শতাংশ, তাঁদের জন্যই এই বাজেটে কিছু নেই। এরা ২০২৪ সালে মোদিকে ফেরাবার জন্য বিজেপিকেই কেন ভোট দেবেন, এই প্রশ্ন এদিন উঠে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।
আরও পড়ুন রেল বাজেট সর্বোচ্চ, কিন্তু সব কী বন্দে ভারতই খেয়ে নেবে, উঠছে প্রশ্নও
অনেকেই আশা করেছিলেন এবারের বাজেটে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে নূন্যতম ২০০ দিন করা হবে। তা তো করা হয়ইনি, উল্টে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ টাকার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। রান্নার গ্যাস, পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমাবার বিশয়ে কোনও ঘোষণাই হয়নি। বোঝা যাচ্ছে এই বিষয়েও পেঁয়াজের মতোই খুব একটা আগ্রহ নেই নির্মলা তথা মোদি সরকারের। মোদি দেশের ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। গত ৯ বছরে ১৮ কোটি চাকরি কিন্তু তিনি দিতে পারেননি। নির্মলার এদিনের বাজেটেও ১ কোটি চাকরি দানের কোনও প্রতিশ্রুতি নেই। কৃষকদের দমন করতে মোদি সরকার যতটা উঠে পড়ে লেগেছিল, তার ছিঁটেফোঁটাও কৃষক দরদী কোনও পদক্ষেপের সন্ধান মিলল না নির্মলার বাজেটে। গ্রামীণ ভারত আজও ভারতের মেরুদণ্ড, অথচ সেই গ্রামীণ ভারতের অর্থনীতির উন্নয়নে এদিন নির্মলার বাজেটে কিছুই ঘোষণা করা হয়নি। তাহলে মানুষ কেন মোদিকে বা বিজেপিকে ২০২৪-এ ভোট দেবে? শুধু হিন্দুত্বের টনিকে ভোটে জেতা যাবে তো? প্রশ্ন ঘুরছে এখন বিজেপিরই অন্দরে।