নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ নয় কাল। কাল নয় পরশু। পরশু নয় তরশু। তরশু নয় অন্য কোনও দিন। এভাবেই তারিখ পে তারিখ। শুধু তাই নয়, সেই তারিখও আবার ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যা সব হবে বলে এই সব তারিখ দিচ্ছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সেই সবের ছিঁটেফোঁটাও দেখতে পাচ্ছেন না কেউ। আর তাই রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ওপর থেকে ক্রমশ আস্থা উঠে যাচ্ছে দলেরই নেতাকর্মীদের। বরঞ্চ তাঁদের কাছে গোটা বিষয়টি যেন ছেলে ভুলানো ছড়া হয়ে যাচ্ছে। ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে, বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে!’ কিন্তু এই ছেলে ভুলানো ডেডলাইন দিয়ে কতদিন ভুলিয়ে রাখবেন বাংলার আমজনতাকে। তাই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা এখন দলেই প্রশ্নের মুখে। একই সঙ্গে প্রশ্নের মুখে তাঁর মুখের বুলির বিশ্বাসযোগ্যতাও।
আরও পড়ুন দূরত্ব যে কমেছে সেটা আবারও বুঝিয়ে দিলেন মমতা
গত বছরে ৩টে ডেডলাইন দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। ১২, ১৪ ও ২১ ডিসেম্বর। কিন্তু ১২ তারিখ আসানসোলে বিজেপির(BJP) অনুষ্ঠানে মানুষের পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ছাড়া আর কিছুই হয়নি। দলের নীচুতলার নেতা থেকে কর্মী সবাই নিরাশ-হতাশ। কত তাঁরা আসা করেছিলেন। বাংলায় সরকার পড়ে যাবে, বাংলার সব থেকে বড় ডাকার গ্রেফতার হবে, কেষ্টকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করা হবে! কিন্তু কিছুই হয়নি। কিন্তু এতকিছুর পরেও ডেডলাইন দেওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখছেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবারও নতুন করে আরও একটা ডেডলাইন দিয়েছেন। এদিন পূর্ব মেদিনীপুর(Purba Midnapur) জেলার তমলুক সাংগঠনিক জেলার ভগবানপুর-১ উত্তর মণ্ডলের কর্মী সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। মকর সংক্রান্তির আগে পৌষমাস। মলমাস চলে যাওয়ার পর আমরা শুভ কাজে নামব। এই তোলামূল পার্টি-কে গোড়া থেকে উৎখাত করে ফেলতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও তাঁর ভাইপোর পরিবারবাদ, সীমাহীন দুর্নীতি, তুষ্টিকরণ, তোষণের রাজনীতি আমরা খতম করবই। পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে উৎখাত রাজ্যে রাষ্ট্রবাদী ডবল ইঞ্জিন সরকার গড়তে হবে। তৃণমূলের চোরেদের সাফাই করতে হবে। বড় চোর ডাকাতদের ডিসেম্বরে সাফাই করতে পারিনি। তবে এর মধ্যে করব। বড় ডাকাতদের আমরা তুলবো। ছোট ডাকাতদের আপনারা একদম গোড়া থেকে তুলে ফেলবেন। সব গ্রাম থেকে চোরদের তাড়াতে হবে।’
আরও পড়ুন কৈফিয়ত তো আমাকে দিতে হবে, কেন বললেন মমতা
কিন্তু এখন কর্মীদের মধ্যেই পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, এভাবে আর কটা ডিসেম্বর, জানুয়ারি পার হবে? কোনও ডেডলাইনই তো মিলছে না। দলের মধ্যেও প্রশ্ন উঠেছে। কেন দিচ্ছেন এই সব ডেডলাইন? এতে দলের কী লাভ হচ্ছে? বরঞ্চ না কোনও কিছুই না মেলায় দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। লোকে হাসাহাসি করছে। কিন্তু এই প্রশ্নগুলো রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কানে ঢুকছে কোথায়। তিনি তো এখন গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল হয়ে সভা করে বেড়াচ্ছেন আর ডেডলাইন বিলিয়ে বেড়াচ্ছেন। দলকেও হাস্যখোরক পদার্থে পরিণত করছেন। সব দেখে দলের আদি কর্মীদের অনেকেই কিন্তু মনে করছেন, ‘উনি বিজেপিতে আসেননি। বরঞ্চ বিজেপিকে ঘেঁটে দিতে ওনাকে পিসিমণিই বিজেপিতে পাঠিয়েছেন। বাপ-ব্যাটা নাটক করছে আর দলটা শেষ হয়ে যাচ্ছে।’