নিজস্ব প্রতিনিধি: আনিসকাণ্ডে রাজ্য সরকার এবার কিছুটা হলেও জয়ের মুখ দেখল। কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) খারিজ হয়ে গেল আনিস মৃত্যুর ঘটনায় সিবিআই(CBI) তদন্তের দাবি। এই দাবিকেই সামনে রেখে শুধু বামেরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করার হুমকি দিয়েছিল তাই নয়, আনিসের পরিবার ও পরিজনও এই একই দাবি জানিয়ে এসেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে আনিস কাণ্ডের মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের(State Government) তরফে জানানো হয়, হাওড়া জেলার কোনও পুলিশকেই যেমন তদন্তের স্বার্থে গঠিত সিটে(SIT) রাখা হয়নি তেমনি রাখা হয়নি আমতা থানার কোনও পুলিশ আধিকারিককেও। সিটের সদস্যরা তদন্তের স্বার্থে হাওড়া জেলা বা আমতা থানার যে কোনও পুলিশকর্মীকে বা আধিকারিককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে স্বচ্ছতা বজায় রেখে এই তদন্ত করা হবে ও আদালতকে তার রিপোর্ট দেওয়া হবে। রাজ্যের এই বক্তব্য শুনে কলকাতা হাইকোর্টও সিটের মাধ্যমে তদন্তেই আস্থা জ্ঞাপন করেন। তবে তাঁরা জানিয়েছেন, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে সিটকে তদন্তের রিপোর্ট(Report) জমা দিতে হবে আদালতে।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টে বেশ ভালই ধাক্কা খেতে হয়েছে আনিসের পরিবারকে। এক তো তাঁদের সিবিআই তদন্তের দাবি খারিজ হয়েছে, দুই তাঁরা আনিসের মোবাইল(Mobile) পুলিশকে না দেওয়ার যে কথা জানিয়ে আসছিলেন সেই অবস্থানকেও ধাক্কা দিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশ মামলাকারীদের উপস্থিতিতে, আনিসের মোবাইলে সিটের হাতে তুলে দেবে পরিবার। তাঁদের সামনেই সিট সেই মোবাইল সিল করে তা পাঠাবে হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিএফএসএল(CFSL)-এর কাছে। তাঁরা ওই মোবাইলের ফরেন্সিক(Forensic) পরীক্ষা করে তার তথ্য বিশ্লেষন করবে। তারপর সেই রিপোর্ট তাঁরা সিট ও মামলাকারীর হাতে তুলে দেবেন। সেই সঙ্গে রিপোর্ট জমা পড়বে আদালতেও। ধাক্কা এসেছে আনিসের দেহ দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার দাবিকে ঘিরেও। সিট জানিয়েছিল, তদন্তের স্বার্থে তাঁরা আনিসের দেহ কবর থেকে তুলে তা দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করবে। কিন্তু তাতেও বাদ সেজেছিল আনিসের পরিবার। এদিন কিন্তু আদালত সাফ জানিয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিকের উপস্থিতি আনিসের দেহ তুলে তা জেলা জজের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বারের জন্য ময়নাতদন্ত(Post Mortem) করতে হবে। সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আদালত, সিট ও মামলাকারীদের হাতে দিতে হবে।
ধাক্কা এসেছে বয়ান দেওয়া ঘিরে আপত্তি ও আইটি প্যারাডের আপত্তি নিয়েও। সিটের তরফে বার বার আনিস খানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর বাবা ও দাদাকে বয়ান দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সেই বয়ান দিতে অস্বীকার করেন। তাঁদের দাবি ছিল, সিবিআই তদন্ত ছাড়া তাঁরা আর কিছুই চান না। পুলিশ বা সিটের তদন্তে তাঁদের আস্থা নেই। তাঁরা না বয়ান্ন দেবেন, না স্নিসের মোবাইল তাঁদের দেবেন। কিন্তু এদিন কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে সিট যেহেতু আদালতের পর্যবেক্ষণের আওতায় তদন্ত করছে তাই তাঁদের সঙ্গে সব ক্ষেত্রেই তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে। তাঁরা চাইলে দিতে হবে বয়ানও। একই সঙ্গে খুনের ঘটনায় আমতা থানার হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলেন্টিয়ার প্রীতম ভট্টাচার্যের গ্রেফতারির পরে সিটের তরফে আনিসের বাবাকে টি আই প্যারেডে থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এদিন হাইকোর্ট জানিয়েছে, টি আই প্যারাডে সিটকে সহযোগিতা করতে হবে। সব মিলিয়ে অনেকটাই পায়ের নীচে জমি খুঁজে পেল রাজ্য পুলিশ প্রশাসন। তুলনায় জমি হারালো আনিসের পরিবার।