নিজস্ব প্রতিনিধি: হাতে আর মাত্র দুই সপ্তাহ। তার মধ্যেই মহানগরের রাজপথে নেমে আসবে আমজনতার ঢল। কেননা এই সময়টার জন্যই বাঙালি সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে। দুর্গাপুজো বলে কথা, ঘরে বসে থাকা কী চলে। তবে গতবছর কার্যত ঘরে বসেই বাঙালি তথা পুজোপ্রেমীদের কাটাতে হয়েছে। কেননা পুজোর মুখেই নেমে এসেছিল কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ। মণ্ডপে ঢুকতে পারবেন না দর্শনার্থীরা। এবারেও সেই একই নির্দেশ চেয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। তবে তার সঙ্গে বাড়তি উদ্বেগ জাগিয়ে তুলে কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক নির্দেশিকা। যেখানে বলা হয়েছে, যে সব জেলায় কোভিড সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি, সেখানে কোনও ধরনের জনসমাগমের অনুমতি যেন না দেয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। গোটা রাজ্যের মধ্যে একমাত্র কলকাতাতেই এখন কোভিড সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি। আর তার জেরেই কপালে ভাঁজ পড়েছে পুজোপ্রেমীদের।
গত বছর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে দর্শকদের প্রবেশাধিকার ছিল না মণ্ডপে। কার্যত রাজ্য জুড়ে গোটা উৎসব মরশুমে এই বিধি বলবৎ ছিল। মন খারাপ হলেও পুজোপ্রেমীদের বেশিরভাগকেই মেনে নিতে হয়েছিল সেই নির্দেশ। কিন্তু এবছর অনেকেই কোভিডের টিকা পেয়ে গিয়েছেন। কোভিড পরিস্থিতিও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কলকাতা বাদ দিয়ে রাজ্যের সব জেলাতেই কোভিডের সংক্রমণ এখন ৫ শতাংশের নীচে। এমনকি তার মধ্যে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি জেলাও রয়েছে। কিন্তু তারপরেও কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক রাজ্যের মুখ্যসচিবকে এক চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছে, রাজ্যের যে সব জেলায় কোভিড সংক্রমণের হার এখন ৫ শতাংশের বেশি, সেখানে উৎসবের মরশুমে যেন কোনও ধরনের জনসমাগমের অনুমতি যেন না দেয় রাজ্য সরকার। তবে যেখানে ৫ শতাংশের কম রয়েছে সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে জনসমাগম হতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি মানুষের ভিড় করা যাবে না। স্থানীয় প্রশাসনকে ওই জমায়েতের ওপরে কড়া নজরদারি করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। কেউ নিয়ম ভাঙলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে প্রশাসনকে। কিন্তু যে এলাকাগুলি কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসাবে চিহ্নিত রয়েছে, অথবা যে জেলাগুলিতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি, সেখানে যাতে কোনও জনসমাগমই না হয়, স্থানীয় প্রশাসনকে তা দেখতে বলা হয়েছে।
আর স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই নির্দেশ ঘিরেই এখন অনেকেই মনে করছেন চলতি বছরেও গত বছরের মতোই পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাবে। অর্থাৎ মণ্ডপে থাকবে না দর্শকদের প্রবেশাধিকার। তবে কলকাতার পুজো উদ্যোক্তারা সিংহভাগই জানিয়েছেন, এবারে যে নির্দেশই আসুক না কেন গত বছরের মতো মণ্ডপের দরজা সকলের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে না। তার একটা অন্যতম কারন এবারে অনেকেই ভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ পেয়ে গিয়েছেন। অনেকেরই দুটো ডোজও হয়ে গিয়েছে। আদালত জনস্বার্থ মামলায় যে রায়ই দিক না কেন এই বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারবে না। তাছাড়া গতবারের থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারে অনেক পুজো উদ্যোক্তাই তাঁদের মণ্ডপ অনেকটাই খোলাখুলি রাখছেন যাতে দূর থেকেই দর্শনার্থীরা থিম ও ঠাকুর দুইই দেখতে পারেন, বুঝতে পারেন। আর নবান্নের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা এসেছে ঠিকই। তবে সেটা পরামর্শ। সেই নির্দেশের কতখানি কী বলবৎ হবে সেটা রাজ্য সরকারই ঠিক করে দেবে। তাই উদ্বেগের কিছু নেই।