নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও মুর্শিদাবাদ: রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যার পর দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্স করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব। মুর্শিদাবাদের বর্তমান পরিস্থিতি কি এবং কি ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন তা জানতে চাইলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব। কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তার নির্দিষ্ট সময়ে কেন্দ্রকে টাইম টু টাইম জানানোর নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব।এদিকে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। সামশেরগঞ্জ থানায় পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজিব কুমার। এদিকে মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক দাবি করেছেন সেখানে পরপর ঘটে যাওয়া হিংসাত্মক ঘটনায় বিএসএফকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল। তাদের রাস্তায় নামতে বলা হয়নি। কিন্তু তারা এলাকায় টহল দিতে শুরু করে এবং গুলি চালালে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। বিএসএফকে কোন ডাকা হলেও বিএসএফকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জেলাশাসক বাধা দিচ্ছে বলে বিরোধী দল বিজেপি হাইকোর্টে শনিবার যে অভিযোগ করেছেন তার প্রত্যুত্তরে এই কথা জানান মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক।

শনিবার মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের ২ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। অগ্নিগর্ভ মুর্শিদাবাদের শান্তি ফেরাতে পুলিশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর করা মামলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিলেন হাইকোর্টের দুই বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরী।দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছেন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে রাজ্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য নিতে পারে। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মুশিদাবাদের সেখানে আদালত চুপ করে বসে থাকতে পারে না বলে জানিয়ে দেন বিচারপতি সৌমেন সেন। মুর্শিদাবাদে ইতিমধ্যে ৭ কোম্পানি বিএসএফ রয়েছে রাস্তায়। শনিবার মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে তিনজনের মৃত্যু। সামসের গঞ্জে বাবা ও ছেলেকে কুপিয়ে খুন। শনিবার দুপুরে মিলল দুজনের রক্তাক্ত দেহ।ওয়াকফ বিল নিয়ে মুর্শিদাবাদে প্রাণ গেল দুই। সামসেরগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। বাবা ও ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে শামসেরগঞ্জের জাফরগঞ্জ বাড়ির। আন্দোলনকারীদের হাতে মৃত্যু হয়েছে বাবা ও ছেলের বলে অভিযোগ। গতকালের ঘটনার পর শনিবার সামসেরগঞ্জের জাফরগঞ্জ এলাকায় বাড়ির সামনে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় বাবা ও ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত বাবা ও ছেলের নাম হরগোবিন্দ দাস(৭৪) ও চন্দন দাস(৪০)। একইসঙ্গে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে(Murshidabad Medical Hospital) গুলিবিদ্ধ এক কিশোরের মৃত্যু হয় শনিবার। এখনো পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের গোলমালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর দাবি জানিয়ে শুভেন্দু অধিকারী আবেদন জানান হাইকোর্ট- এ। বিকেল সাড়ে চারটেয় হাইকোর্টে বিশেষ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। পরে আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করার নির্দেশ দেন।।এদিকে, মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর সুতি সহ একাধিক জেলায় ক্রমাগত গোলমাল এর ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ করে দিল বিএসএফ। সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় যে গোলমাল হচ্ছে সেই গোলমাল এর নেতৃত্বে কোন বহিরাগতরা আছে ,তাদের চিহ্নিত করতে তৎপর হয়েছে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা বাহিনী। বহিরাগতদের চিনিয়ে দিতে পারলে গ্রামবাসীদের পুরস্কৃত করবে পুলিশ। গ্রামে গ্রামে পুলিশের প্রচার শুরু।এদিকে, শুক্রবারের ঘটনার পর এখন সুতির সাজুর মোড়ে NH 12 সচল থাকলেও পার্শবর্তি এলাকর দোকানপাঠ বন্ধ। সেইরকম ভাবে সাধারন মানুষকে রাস্তায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না ।সামসেরগঞ্জে ও একই পরিস্থিতি শনিবার সকাল থেকে ।এলাকা থমথমে রয়েছে এবং বি এস এফ টহল দিচ্ছে। বেলা গরানোর সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় বি এস এফ এর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে।সূত্রের খবর , দুজন গুলিতে আহত হয়েছে  বলে অভিযোগ আহতদের পরিবারের। দুজনে গুলিতে আহত হয়েছে।

আবারো শুক্রবারের ঘটনার পর সুতি থেকে প্রায় ৭০ জন ও সামসেরগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ জনকে আটক করেছে জঙ্গীপুর পুলিশ জেলার অফিসাররা।গোলাম মহিউদ্দিন শেখ, ২১ বছর, হাসান সেখ ,১২ বছর বয়স এই দুই যুবক ও নাবালক শনিবার সকালে ধুলিয়ানে গুলিবিদ্ধ হয়। শুক্রবার ও আরো এক কিশোর মাসির বাড়ি থেকে ফেরার সময় গোলমাল এর মাঝে পরে গুলিবিদ্ধ হয় এবং বহরমপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়। রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন শৃঙ্খলা) জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে মোট ১৫ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার মুর্শিদাবাদ জেলায় অশান্তির ঘটনায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন যারা গুন্ডামি করছে তাদের বরদাস্ত করা হবে না। অশান্তি থামাতে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওয়াকফ আইনের বাতিলের ঘটনাতে গোলমালে মানুষের জীবন রক্ষা করা বড় দায়িত্ব বলে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার(DG Rajeev Kumar)  জানিয়েছেন। এদিকে মুর্শিদাবাদে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার দরুন মোতায়েন করা হয়েছে বিএসএফকে। রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আইন যেন কেউ হাতে না নেয় কোন অঘটন ঘটলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার তা নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চান রাজ্য পুলিশের প্রধান। তিনি বলেন সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে যেন খেলা না করা হয়। পুলিশ সেনাবাহিনী নয় সেটাও জানিয়ে দেন ডিজি। সকলকে সতর্ক থাকার আবেদন জানান ডিজি। মানুষের মধ্যে থেকে ভয় শেষ না হলে অশান্তি থামানো যাবে না বলে জানানো হয়। এই বার্তা দেন রাজ্যে পুলিশের এডিজি আইন-শৃঙ্খলা(ADG Law And Order) জাভেদ শামীম। আজিমগঞ্জ – এর রেলের সম্পত্তি ভাঙচুর নষ্ট করা হয়েছে ।