নিজস্ব প্রতিনিধি: বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা বা DA নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের(West Bengal State Government Employees) একাংশ। সেই আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের(Sangrami Joutho Mancha) ব্যানারে। এ বার সেই মঞ্চেরই ১৫জন নেতার বিরুদ্ধে উঠল আর্থিক তছরুপের অভিযোগ! তাঁদের বিরুদ্ধে সরাসরি আর্থিক তছরুপের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের কাছে চিঠি লিখেছেন জনৈক দেবপ্রসাদ হালদার। চিঠিটি পাঠানো হয়েছে গত ১৯ মে। অভিযোগের আকারেই দেবপ্রসাদের চিঠিটি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য, কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, রাজ্য পুলিশের ডিআইজি সিআইডি, ময়দান থানার পুলিশ আধিকারিক এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফোর্ট উইলিয়ামের কমান্ড্যান্টকে।
আরও পড়ুন বাংলার ৩ হাজার গ্রামে ‘দুয়ারে ব্যাঙ্ক’, উদ্যোগী মমতার সরকার
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যাঁদের নামে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে যেন অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সঙ্গে সংগঠনের আহ্বায়ক তথা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ ভাস্কর ঘোষ(Bhaskar Ghosh) ও কোষাধ্যক্ষ শৈবাল সরকারকে(Shaibal Sarkar) অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিও তোলা হয়েছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ওই দুই নেতাকে গ্রেফতারের দাবির পাশাপাশি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে সন্দীপ ঘোষ, চন্দন চট্টোপাধ্যায়, নির্ঝর কুন্ডু, রাজীব দত্ত, ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল-সহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে। পাশাপাশিই দেবপ্রসাদের চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে এই মর্মে যে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলে মঞ্চের বেশ কিছু নেতা ‘স্বৈরাচারী মনোভাব’ দেখাচ্ছেন। অভিযোগকারী দেবপ্রসাদের বাড়ি দক্ষিণ শহরতলির নরেন্দ্রপুর এলাকায়। তাঁর কর্মস্থল ক্যামাক স্ট্রিটের। দেবপ্রসাদ অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্তেরা তাঁকে হুমকিও দিয়েছেন।
আরও পড়ুন কলকাতার বুকে ১০০ দিনের কাজে ছাঁটাই রুখলেন ফিরহাদ
যদিও দেবপ্রসাদের অভিযোগের উত্তরে যৌথ মঞ্চের নেতা সন্দীপ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘এই আর্থিক তছরুপের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ, আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক অডিট করে আমাদের সঙ্গী ৪২টি সংগঠনকে সেই রিপোর্ট দিয়েছি। তারা সকলেই অডিট রিপোর্ট দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। আর পেশাদার অডিটার দিয়ে দ্বিতীয় বার অডিট করিয়ে তা কয়েক দিনের মধ্যেই জনসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, দিল্লিতে ধর্না দেওয়ার সময় একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে মোটা টাকা চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের বিরুদ্ধে। কিন্তু শেষে মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছিল, কোনও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনকে তারা চাঁদা বা অনুদান দেয়নি। দিল্লিতে যেখানে গিয়ে তাদের সদস্যেরা থেকেছিলেন, সেখানকার ভাড়া বাবদ টাকা মেটানো হয়েছে।
আরও পড়ুন এ তো রেড কার্পেট বিছিয়ে দুর্নীতিকে অভ্যর্থনা, ট্যুইট চিদাম্বরমের
এদিকে গত শনিবার রাজ্য সরকার এক নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময়ে কোনও রকম কর্মবিরতিতে সামিল হওয়া যাবে না। আন্দোলনের নামে ছুটিও নেওয়া যাবে না। সেই নির্দেশিকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে যৌথ মঞ্চ। পাশাপাশি এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে তাঁরা কর্মবিরতি পালন করবে বলেও জানিয়েছে। সংগঠনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের তরফ থেকে যে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সারা পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মী, শিক্ষক মহল, কারাখানার মালিকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ইতিহাস বলছে অন্য কথা! ১৯৮৪ সালে তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই এই ধরনের নির্দেশিকা জারি হয়েছিল। ৩৪ বছরের বাম শাসনে সরকারি অফিসে ঠিক সময়ে কর্মীদের হাজিরা সংক্রান্ত মোট ১৪টি নির্দেশিকা জারি হয়। ১৯৮৪ সালের ১৬ অক্টোবর যে নির্দেশিকা জারি হয়েছিল, তাতে মিটিং না করার বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ করা হয়। বলা হয়েছিল, টিফিনের সময় যাঁরা কাজকর্ম করছেন, সভা বা স্লোগানের মাধ্যমে তাঁদের কাজে অসুবিধা করা যাবে না।