নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) বুকে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। সেই সময় পর্যন্ত তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পুরোটাই বাম বিরোধী আন্দোলনের। যদিও দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতাই মনে করেন মমতা বামেদের থেকেও অতিবড় বামপন্থী। বাংলার ক্ষমতায় এসে মমতা কিন্তু একাধিকবার চেষ্টা করেছেন বামেদের(Left Front) সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে। এখনও তিনি সেই পথেই আছেন। কিন্তু যে মমতার হাতে পরাস্ত হ্যে ৩৪ বছরের রাজত্বপাট হারিয়েছেন বঙ্গের বাম নেতারা, তাঁরা কিছুতেই অন্ধ মমতা বিরোধিতার পথ থেকে সরে আসতে পারেননি। কিন্তু এটাও ঘটনা অনেক বামপন্থীই বাম জমানার পরবর্তীকালে তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন বা করে চলেছেন। কিন্তু বামেরা বড় ভোট ব্যাঙ্ক হারিয়ে ফেলেছেন এই বাংলায় বিজেপির(BJP) উত্থানের পরে। কার্যত বাংলার বাম ভোট ব্যাঙ্কই চলে গিয়েছে গেরুয়া দখলে। এখন সেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গেই তৃণমূলের নতুন করে সুসম্পর্ক তৈরির ছবি ধরা পড়েছে। আর সেই ছবি জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও ভাবাচ্ছে বামেদের। সেখানে আবারও প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাচ্ছে বেঙ্গল লাইন।
আরও পড়ুন শান্তিকুঞ্জে অভিষেককে চায়ের আমন্ত্রণ দিব্যেন্দুর
কী এই বেঙ্গল লাইন? বাংলার বুকে ৩৪ বছরের বাম রাজত্বের অবসানের পরেও বাম নেতারা অন্ধ ও তীব্র মমতা বিরোধিতার পথ থেকে সরে আসতে পারেননি। সেই মমতা বিরোধিতার জন্যই বাংলার বাম নেতারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়তেও পিছুপা হননি ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। সেই সময় প্রকাশ কারাত ও সিপিআই(এম)’র কেরল লবি এই জোটের তীব্র বিপক্ষ ছিলেন। কিন্তু বাংলার বাম নেতারা সেই মতকে পাত্তা দিতে চাননি। তাঁদের জেদে একসময় সিপিআই(এম)(CPIM) পলিটব্যুরো এই জোটের পক্ষে সায় দেয়। তবে তাতে শর্ত ছিল এই জোট সাময়িক ও বাংলার বুকেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সেই জোট অবশ্য ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোনও ভেলকি দেখাতে পারেনি। তার জেরে বাংলার বাম নেতারা বেশ কিছুটা নিরাশও হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা অন্ধ ও তীব্র মমতা বিরোধিতার পথ থেকে সরে আসেননি। সীতারাম ইয়েচুরির জমানায় অবশ্য সেই পলিটব্যুরো দেশে বিজেপির সঙ্গে লড়াই করার জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে। এমনকি এই লড়াইয়ে যে কোনও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে হাত মেলাতেও তাঁরা পিছুপা হতে চান না। তার জেরে বঙ্গের বাম নেতাদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই তাঁরা এটাও ঘোষণা করে দেন যে, বিজেপিকে হটাতে যদি মমতাকেও প্রধানমন্ত্রী পদে সমর্থন জানাতে হয়, তাহলে সেটাও তাঁরা জানাবেন।
আরও পড়ুন সিএএ নিয়ে শান্তনুর সভায় এলেন না সুকান্ত মজুমদার!
শুধু এটাই নয়, বাংলার বাম নেতারা এরপর যখনই অন্ধ ও তীব্র মমতা বিরোধিতার পথে হেঁটেছেন, তখনই জাতীয় স্তরের রাজনীতির বাধ্যবাধ্যকতায় পলিটব্যুরো তাঁদের পাল্টা ধমক দিয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিনে রাজ্য রাজনীতির ছবিটাই আমূল বদলে গিয়েছে। বদলের ছবি ধরা পড়ছে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও। মোদি-মমতা কাচজাকাছি আসতেই, তৃণমূল-বিজেপির বিরোধ কমতেই এখন সেই পলিটব্যুরোকেই ভাবতে হচ্ছে এবার কী হবে? মানে মমতাই যদি বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে জোর দেন তো বিজেপির পতন ঘটবে কীভাবে? সিপিআই(এম)-ই বা কোন পথে এগোবে? আর এখানেই ফের বেঙ্গল লাইনের কদর বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ বাংলার বাম নেতারা যেভাবে অন্ধ ও তীব্র মমতা বিরোধিতা চালিয়ে যাচ্ছেন তাকেই আবার গুরুত্ব দিতে চান পলিটব্যুরো সদস্যরা। বাম বাংলার নেতাদেরই পথে হাঁটতে চান সিপিআই(এম)’র নেতারা। তবে বাংলায় যেমন কংগ্রেসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে জোটের দরজা খোলা রেখে বাম নেতারা লড়াই চালাচ্ছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে, ঠিক তেমনই জাতীয় স্তরেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের দরজা খোলা রাখতে চান সিপিআই(এম) পলিটব্যুরোর নেতারা।