নিজস্ব প্রতিনিধি: কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইডি গবেষক এবং আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশের(Mustafa Kamal Palash) দাবি বঙ্গোপসাগরে ৯ থেকে ১১ মে এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’(Cyclone Mocha) সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই ঝড় সৃষ্টি হলে তা ১৩ থেকে ১৬ মে-এর মধ্যে বাংলাদেশের(Bangladesh) বরিশালে(Barishal) আঘাত হানতে পারে। কিন্তু সেই দাবিকে মান্যতা দেননি বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের আধিকারিকরা। কিন্তু সেই তথ্যকে এবার মান্যতা দিল India Meteorological Department বা IMD। তাঁরাও এদিন ট্যুইট করে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির কথা জানিয়েছেন। তার তার জেরেই এবার এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপ করতে চলেছে এপার বাংলার(Bengal) রাজ্য সরকার। কেননা সে বাংলার দিকেও ধেয়ে আসতে পারে।
আরও পড়ুন তৃতীয় মান্যতার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি, আজও বিকল্প নেই মমতার
আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাসের তথ্য তুলে ধরে কামাল পলাশ দাবি করেছিলেন, ৮ থেকে ৯ মে-এর মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এই নিম্নচাপটি ১০মের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে এবং ১১মে এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি ১৪ মে মধ্যরাত নাগাদ বরিশাল এবং চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সরাসরি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসাবে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। সেই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি হতে পারে ১৪০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার। কামালের এই দাবির মান্যতা পাওয়া যায় আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্টের তথ্যেও। এর সঙ্গে কামালের সংযোজন, ‘১৪ মে সন্ধ্যার পর যদি ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানে তাহলে বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চর এবং উপকূলীয় এলাকায় কমপক্ষে ১০ ফুট পর্যন্ত উঁচু জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি যদি ১৭ বা ১৮ মে আঘাত হানে তাহলে ওই এলাকায় ১৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা থাকছে। তাই উপকূল অঞ্চলে সরকারিভাবে দ্রুত বাসিন্দাদের সতর্ক করা, তাদের ধান কেটে নেওয়া, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা দরকার।’
আরও পড়ুন একুশের জয়ের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে মানুষকে অভিনন্দন অগ্নিকন্যার
কিন্তু কামালের এই দাবিকে মান্যতা দিতে চান না বাংলাদেশের সরকারি আবহাওয়াবিদরা। তাঁদের দাবি, ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’র সৃষ্টিই হয়নি। তাহলে বাংলাদেশের আঘাত হানা না হানার প্রশ্ন আসবে কোথা থেকে? আন্তর্জাতিক সব আবহাওয়া মডেল ৯ থেকে ১০ মে-এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে। কিন্তু একটি দায়িত্বশীল সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় থেকে তাঁরা একেবারে নিশ্চিত না হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছেন না। তবে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর যে কামালের দাবিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না সেটা বোঝাই যাচ্ছে। তবে IMD কামালের মতকেই প্রাধান্য দিতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরের বুকে যে ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম হতে চলেছে সেটা জানিয়ে এদিনই তাঁরা ট্যুইট করেছে। পাশাপাশি সতর্ক করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও বাংলাকেও। বেসরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘূর্ণিঝড় তার গতিমুখের পরিবর্তন না করলে তা বাংলাদেশের দিকেই যাবে। কিন্তু তার গতিমুখের পরিবর্তন ঘটলে তা এপার বাংলার দুয়ারে এসে হাজির হবে। সেক্ষেত্রে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে মেদিনীপুরের ৩টি জেলা ও ২৪ পরগনার দুটি জেলা। ধাক্কা লাগবে হাওড়া, কলকাতা ও হুগলির গায়েও। ভুললে চলবে না আয়লা আর আম্ফান দুই সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ই আছড়ে পড়েছিল এই মে মাসেই। তাই ‘মোচা’কে নিয়ে এখন থেকেই সতর্ক হচ্ছে রাজ্য প্রশাসন।