নিজস্ব প্রতিনিধি: মূল দাবি বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা দিতে হবে এবং কেন্দ্রের হারে মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার রীতি চালু করতে হবে। মূলত এই দুই দাবি সহ আরও বেশ কিছু দাবি জানিয়ে মাস তিনেক আগে শুরু হয় রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের(West Bengal State Government Employees) একাংশের DA আন্দোলন। প্রথমদিকে সেই আন্দোলনে(DA Movement) বেশ সাড়া পড়েছিল। কিন্তু ক্রমেই সেই আন্দোলন হয়ে ওঠে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচীর অঙ্গ। আন্দোলনের দাবি দাওয়া চলে যায় পিছনে। পরিবর্তে সামনে আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকার বিরোধী আন্দোলন। এই পরিবর্তন নজর এড়িয়ে যায়নি আন্দোলনকে সমর্থন করা ও তাতে যোগ দেওয়া রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের। আর সেই জায়গা থেকেই অনেকে এই আন্দোলন থেকে নিজেদের দূরত্ব বাড়াতে থাকেন। ভাটা পড়ে আন্দোলনে। এবার সেই আন্দোলন নিয়েই এক বিস্ফোরক তথ্য সবার সামনে হাজির করলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ(Kunal Ghosh)। তাঁর দাবি, এই আন্দোলনে নেপথ্য রয়েছে গেরুয়া ব্রিগেডের মাথা।
আরও পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া, বন্ধ বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়
এদিন কুণাল দুটি বিলের ছবি তুলে ধরে পোস্ট করেন। সেই বিল দুটি অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার(Akhil Bharat Hindu Mahasabha) বিল। দুটি বিল মিলিয়ে মোট ১ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হয়েছে এই হিন্দু সংগঠনটির সঙ্গে বাংলার DA আন্দোলন চালানোর জন্য গঠিত যৌথ সংগ্রামী মঞ্চের। কার্যত বাংলার DA আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ যৌথ মঞ্চের হাতে তুলে দিয়েছে এই হিন্দু সংগঠনটি। কিন্তু কেন দিয়েছে? স্বেই মক্ষম প্রশ্নটি এদিন নিজের ট্যুইটে তুলে ধরেছেন কুনাল ঘোষ। তিনি এদিন তাঁর ট্যুইটে দুটি বিলের ছবি তুলে ধরে লেখেন, ‘এই রশিদগুলি আসল না নকল? যদি আসল হয়, তাহলে যৌথ মঞ্চ দিল্লিতে কাদের আশ্রয়ে ছিল, কোথায় ছিল বুঝে নিন। যদি এই টাকা দেওয়া হয়, তাহলে এত টাকা নগদে কেন? তাহলে টাকা কে বা কারা দিচ্ছে? কত টাকা উঠছে? মঞ্চের পর্দার পেছনের মুখগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। রামবামকং। যদি রশিদ ভুল হয়, মঞ্চ জানাক।’
আরও পড়ুন ১ সপ্তাহে খাস কলকাতায় পাকড়াও ১২ হাজার হেলমেটহীন বাইকচালক
যৌথ মঞ্চের তরফে অবশ্য জবাব মিলেছে যদিও তা ঠিক যুতসই নয়। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ জানিয়েছেন, ‘হোটেলের বদলে যদি আমরা অন্য কোনও জায়গায় পয়সা দিয়ে থাকি, তাহলে আপত্তি জানানোর কী আছে? হিন্দু মহাসভা বলেই কি আপত্তি? আমি পয়সা দিয়ে কোনও ধর্মশালায় থাকলে প্রশ্ন তোলার কোনও জায়গা নেই। মানুষ ঘুরতে গেলে যে কোনও জায়গায় থাকতে পারে। আমরা পাশেই বৌদ্ধ এবং বিড়লা মন্দিরেও ছিলাম। কোথাও তো বিনামূল্যে থাকা হয়নি। বিনা পয়সায় আতিথেয়তা গ্রহণ করলে না হয় প্রশ্ন তুলতে পারতেন। তাছাড়া উনি জানেন না, আমরা নগদে কোনও টাকা দিইনি। অনলাইনে পেমেন্ট হয়েছে।’ যদিও কুণালের দাবি যৌথ মঞ্চ হিন্দু সংগঠনটিকে টাকা দেয়নি। বরঞ্চ হিন্দু সংগঠনটি যৌথ মঞ্চকে টাকা দিয়েছে। আর সেখানেই তাঁর ও আরও অনেকের প্রশ্ন, কেন দিয়েছে!
আরও পড়ুন একা নন জীবন, জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে আরও ১২ বিধায়কের নাম
যদিও এই ঘটনা সামনে আসতেই অনেক আন্দোলনকারী মুখ খুলতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ(Bhaskar Ghosh) আদতে বিজেপির লোক। তাঁর মাধ্যমেই এই আন্দোলন কার্যত হাইজ্যাক করেছে গেরুয়া ব্রিগেড ও বিজেপি। এই আন্দোলন ছিল সরকারি কর্মচারীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলন। কিন্তু সুকৌশলে তা রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করা হয়েছে। বাংলাকে খাটো করতে, রাজ্য সরকারকে খাটো করতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খাটো করতে এবং সর্বোপরি তৃণমূল কংগ্রেসকে খাটো করতে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে আন্দোলন করা হয়েছে। সব ব্যবস্থাই ভাস্করবাবুর মাধ্যমেই হয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের একাংশের। কার্যত তাঁর মাধ্যমেই এই আন্দোলন হাইজ্যাক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অরাজনৈতিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করেছেন শুভেন্দু অধিকারী, মহম্মদ সেলিম, নওশাদ সিদ্দিকিরা। এই ঘটনা মেনে নিতে পারেননি অনেক আন্দোলনকারী। এমনকি কো-অর্ডিনেশন কমিটির অনেক নেতাই। সেই সূত্রে তাঁদের দাবি, কুণাল এদিন এই আন্দোলনের পিছনে থাকা বাম-রাম আঁতাত বিষয়টিকে সামনে এনে কার্যত ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরেছেন।