নিজস্ব প্রতিনিধি: অবশেষে জট কাটল দুর্গা পিতুরি লেনে(Durga Pituri Lane)। উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়(Sudip Banerjee), চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়(Nayna Banerjee) এবং কলকাতা পুরনিগমের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে’র(Biswarup Dey) উপস্থিতিতে রবিবার সকালে বৈঠক হয় দুর্গা পিতুরি লেনে ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দাদের সঙ্গে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের। সেখানেই স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে আরও একদফা ক্ষমা চান মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের পুনর্বাসন দেবে মেট্রো কর্তৃপক্ষই। আর সেই পুনর্বাসন ঠিক মতন দেওয়া হচ্ছে কিনা সেটা নজর রাখবেন সুদীপ-নয়না ও বিশ্বরূপ। সেই সঙ্গে ঠিক হয়েছে আগামিকাল থেকেই দুর্গা পিতুরি লেনে বাড়ি ভাঙার পালা শুরু হয়ে যাবে। আপাতত দুটি বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে সেখানে।
ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো(East West Metro) প্রকল্পের নির্মাণের কারণে মধ্য কলকাতার(Kolkata) বউবাজার(Bowbazar) এলাকার দুর্গা পিতুরি লেনে আবারও এসেছে বিপর্যয়। ২০১৯ সালের পরে আড়াই বছরের মাথায় এই মে মাসে। আবারও মেট্রোর কাজের জন্য সেখানে সরকারি হিসাবে ১৪টি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। তার জেরেই ইতিমধ্যেই ৮২টি পরিবারকে বাড়ি ছেড়ে হোটেলে উঠতে হয়েছে। গত শুক্রবার রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বৈঠক করেন মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সেখানেই তিনি কড়া বার্তা দিয়েছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কেএমআরসিএল-এর আধিকারিকদের। সেই বৈঠকেই ঠিক হয় কোন বাড়ি কীরকম অবস্থায় আছে তা দেখে নিয়ে ভেঙে ফেলা হবে। এরপরেই সমস্যার সূত্রপাত হয় গতকাল বিকাল থেকে। বার বার বাড়ি ভাঙা নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত বদল করতে থাকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এমনকি রবিবার ভোরে দুটি বাড়ির বাসিন্দাদের এক ঘন্টার নোটিসে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়। আর তার জেরেই ক্ষোভ ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে। সেই ক্ষোভের জেরেই এদিন মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সুদীপ-নয়না ও বিশ্বরূপ। সেই বৈঠকে যোগ দেন ক্ষতিগ্রস্থ বাড়িগুলির বাসিন্দারাও।
বৈঠক শেষে নয়না ও বিশ্বরূপ সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘গতকাল বিকাল থেকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ এক এক রকম সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছিল। এক বার বলছে ৩টে বাড়ি ভাঙা হবে, একবার বলছে দুটো বাড়ি ভাঙা হবে, আবার একবার বলছে একতা বাড়ি ভাঙা হবে। এমনকি এদিন ভোরে নোটিস ধরিয়ে একঘন্টার মধ্যে বাড়ি ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। এটা তো সমাধান সূত্র নয়। বার বার এই সিদ্ধান্ত বদল কেন? আর কেনই বা এত তড়িঘড়ি বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ। বাড়ি নিশ্চয়ই ভাঙা হবে। কিন্তু তার আগে তো পরিবারগুলিকে নূন্যতম সময় সুযোগ দিতে হবে যাতে তাঁরা সরে যাওয়ার সুযোগ পান। বাড়ি ছেড়ে তাঁরাই বা কোথায় যাবেন সেটাও তো ঠিক করা দরকার।’
শেষে এদিনের বৈঠকে ঠিক হয়, দুর্গা পিতুরি লেনের ১৬ এবং ১৬/১ বাড়ি দুটি ভাঙা হবে এদিন থেকেই। পরে আবার তা বদল করে ঠিক হয় আগামিকাল সকাল থেকে ওই দুটি বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হবে। পরে বাকি বাড়িগুলি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এবারের বিপর্যয়ে যে মোট ১৪টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেটা এদিন স্বীকার করে নেয় মেট্রো কর্তৃপক্ষ। যে দুটি বাড়ি আগামিকাল থেকে ভাঙা হবে সেই দুটি বাড়ির বাসিন্দাদের এদিনই সব সামগ্রী সরিয়ে নিতে হবে। সেই কাজে সাহায্য করবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। আর পুরো বিষয়টি ভিডিওগ্রাফি করা হবে।
এদিনের বৈঠক শেষে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, ‘এই অবস্থায় চিরস্থায়ী সমাধান সূত্র খুঁজে পাওয়া দরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপার হলেও, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সাহায্য করা হবে। মেট্রোর এই ব্যর্থতার কথা সংসদে তুলে ধরব। আজকের বৈঠকের পর দুটি বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৬ আর ১৬/১ বাড়ি দুটি ইমিডিয়েট ভাঙা হবে। নাহলে বাড়ি দুটি ভেঙে পরে যাবে। তার আগে মালপত্র বের করে নেওয়া হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে এলাকার বিপজ্জনক বাড়িগুলি ছাড়াও গোটা এলাকার বাড়িগুলি পরীক্ষা করে দেখবে।’