নিজস্ব প্রতিনিধি: হয়দরাবাদের National Remote Sensing Center বা NRSC’র বিজ্ঞানীরা ১৯৮৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভূমিধসের যাবতীয় ঘটনার ভিত্তিতে সর্বভারতীয় স্তরে একটি Database তৈরি করেছেন। এই কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ISRO’র Satelite Data-ও। বিশ্লেষণ করা হয়েছে বিভিন্ন ঋতুতে ধসের ঘটনাগুলি। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালের কেদারনাথ বিপর্যয় এবং ২০১১ সালে সিকিমে ভূমিকম্পের জেরে ধস নেমে আসার মতো ঘটনাগুলি। এইসব তথ্যের ভিত্তিতেই বিজ্ঞানীরা দেশের(India) ১৭টি রাজ্য ও দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৪৭টি জেলাকে ধসপ্রবণ(Most Lansslide Auccoring Districts) বলে চিহ্নিত করেছেন। তার মধ্যে ৩৫তম স্থানে রয়েছে বাংলার দার্জিলিং(Darjeeling) জেলাও। যোশিমঠের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে এই তথ্য নিশ্চিতভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা পাহাড়ের যা অবস্থা তাতে দেশের অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন যোশীমঠের মতো অবস্থা যে কোনও দিন বাংলার দার্জিলিংয়ের বুকেও ঘটে যেতে পারে।
আরও পড়ুন আগামী সপ্তাহে ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী
National Remote Sensing Center’র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে ধস নামার ভিত্তিতে এই প্রথম সর্বভারতীয় স্তরে ডেটাবেস তৈরি হল। গত দু’দশকে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধস নেমেছে উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগ ও তেহরি গারোয়াল জেলায়। ভূমিধসের নিরিখে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বড় অংশই। জনবহুল এইসব অঞ্চলে পরিবেশের ক্ষতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিপদ দিন দিন বাড়ছে। জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকি বাড়ছে। আবার ওই সব এলাকার মধ্যে রয়েছে আর্থ-সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্র ও পর্যটনস্থল। বিশ্বের যে চারটি দেশে ভূমিধসের বিপদ সবচেয়ে বেশি, সেই তালিকায় রয়েছে ভারতও। বরফে ঢাকা অঞ্চল সহ দেশের ১২.৬ শতাংশ ভূখণ্ড বিপজ্জনক এলাকার তালিকায় রয়েছে। হিমালয়, পশ্চিমঘাট, কোঙ্কন, পূর্বঘাট পর্বতমালার বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বেশি জনঘনত্ব, ভারী বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ি এইসব এলাকায় বিপদ বেড়েই চলেছে।
আরও পড়ুন ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ছেন কেষ্ট কন্যা সুকন্যা
ভারতে ভূমিধসের কারণে বড় বিপর্যয়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে বর্ষাকালে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাইক্রোওয়েভ স্যাটালাইট ডেটা ও ইনসার প্রযুক্তির কারণে পাহাড়ের ঢালে মিলিমিটার স্তরের বিচ্যুতিও তাঁরা এখন শনাক্ত করতে সক্ষম। তবে ভূমিধস ঠিক কোন দিক বরাবর নেমে আসবে, কতটা এলাকা তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বর্ষার সময় পাহাড়ের ঢালে সামান্য কোনও চ্যুতি ধরা পড়লে এখন সতর্ক করে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিকে। ভূমিধসের তথ্য সংগ্রহে একটি মোবাইল অ্যাপও তৈরি করেছে ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার। সেই সঙ্গেই দেওয়া হচ্ছে সতর্কবার্তাও। দেশের যে জেলা গুলি সব থেকে বেশি ধসপ্রবণ হিসাবে উঠে এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে ওপরের দিকে রয়েছে, উত্তরাখণ্ডের দুই জেলা— রুদ্রপ্রয়াগ ও তেহরি গারোয়াল। এছাড়া প্রথম দশে রয়েছে কেরলের ত্রিচূড়, কোঝিকোড়, পালাক্কাড় ও মালাপুরম জেলা। আছে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি ও পুঞ্চ জেলা দুটিও। সিকিমের দক্ষিণ ও পূর্ব জেলাও আছে এই তালিকায়। এর পাশাপাশি তালিকায় স্থান পেয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৬৪টি জেলাও।