নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার বুকে শিক্ষকতার পেশা এখনও হাজারও অভাব, অভিযোগ, দুর্নীতির মধ্যেও সম্মানটা ধরে রাখতে পেরেছে। মানুষ এখনও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শ্রদ্ধার চোখেই দেখেন। কিন্তু শুনলে অবাক হয়ে যাবেন এই শিক্ষক-শিক্ষিকা হওয়ার জন্য বাংলার বুকে ডিএলএড কোর্স করতে কলেজগুলিতে পড়ুয়া পিছু ৫ হাজার টাকা করে নিয়েছিল। যদিও কেন এই টাকা নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে কোনও কলেজই কোনও য্থাযথ ব্যাখা দিতে পারেনি। আর তাঁর জেরেই ইডি(ED) বা এনফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্টের আধিকারিকদের ধারনা এটা আসলে ছোট আকারের দুর্নীতি, যার পরিমাণ ৩১ কোটি টাকার আশেপাশে। এখন সেই ঘটনার জেরেই ইডির আধিকারিকেরা পৃথক তদন্ত শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন জামিনের আর্জি খারিজ, ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজত মানিকের
বাংলায় ডিএলএড কলেজগুলিতে(D.EL.ED College) ভর্তির জন্য অফলাইন(Off Line Admission) প্রক্রিয়া চালু আছে। তার জেরে কোন কলেজ কোন পড়ুয়ার কাছ থেকে ঠিক কত টাকা নিচ্ছে তা সবসময় জনসন্মুখে আসে না যদি না কোনও পড়ুয়া তা সামনে আনেন। রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের(Manik Bhattacharya) বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে ইডির আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন ডিএলএড কোর্সে অফলাইনে ভর্তির জন্য কলেজগুলি পড়ুয়াপিছু ৫ হাজার টাকা করে নিত। ইডির তরফে এর আগেই আদালতে তুলে ধরা হয় মানিক ভট্টাচার্যের ছেলের সংস্থার সঙ্গে ৫৩০টি ডিএলএড কলেজকে পরিষেবা দেওয়ার চুক্তির বিষয়টি। প্রতিটি কলেজ থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পরিষেবা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এখন ইডির আধিকারিকদের ধারনা ডিএলএড কলেজগুলিতে ভর্তির ক্ষেত্রে নেওয়া এই বাড়তি ৫ হাজার হিসেব বহির্ভূত টাকা কার্যত মানিকের নির্দেশেই নেওয়া হয়েছে। বাংলাজুড়ে সেই খাতে প্রায় ৩১ কোটি টাকা উঠেছে। এই টাকা কোথায় আর কার কাছে রয়েছে, গোটা বিষয়টির সঙ্গে মানিক নিজে বা তাঁর ছেলের সংস্থা কতখানি জড়িত সেটাই এখন খতিয়ে দেখতে চাইছেন ইডির আধিকারিকেরা।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েতের আগে সক্রিয় হবেন তৃণমূলের মুকুল? জল্পনা রাজনৈতিক মহলে
ইডির আধিকারিকদের দাবি, মানিকবাবু এনসিটিইর(NCTE) তরফে রাজ্যের প্রতিনিধি ছিলেন। ডিএলএড কলেজ খোলা, তাদের বার্ষিক লাইসেন্স পুর্ননবীকরণ সিট সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদিতে মানিকবাবুই ছিলেন শেষে কথা। এই সমস্ত কলেযে পড়ুয়াদের মধ্যে গোপনে প্রচার চালান হতো, কেউ যদি শিক্ষক চাকরির জন্য টাকা দিতে রাজি থাকেন, তাহলে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন। আগ্রহীরা নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তাঁদের নাম সংগ্রহ করা হতো। নামের তালিকা পাঠানো হতো মানিকবাবুর কাছে। সেই তালিকায় থাকা ছাত্র ছাত্রীদের সবাইকে পরীক্ষায় বসতে হতো না। আবার বসলেও, সাদা খাতা জমা দিয়েই উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ মিলত। বিনিময়ে মোটা টাকা নেওয়া হতো। মানিকবাবুর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে একাধিক ডিএলএড কলেজের পাঠানো পড়ুয়ার তালিকা মিলেছে। সেই তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা রয়েছেন বেআইনিভাবে নিয়োগ হওয়া ২৫০০ জনের মধ্যে।
আরও পড়ুন অশোকের সঙ্গে দুই বিজেপি নেতার বৈঠক, সরকার ফেলার চক্রান্ত বলে দাবি তৃণমূলের
পাশাপাশি রাজ্যের ৬০০টি ডিএলএড কলেজ পড়ুয়াপিছু ৫০০০ হাজার টাকা বাড়তি নিয়েছে অফ লাইনে ভর্তির সময়ে। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল থেকে এভাবে ভর্তি হয়েছে। ঘটনাচক্রে এই সময় এনসিটিইর তরফে রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন মানিকবাবুই। ইডি আধিকারিকদের দাবি, নিয়ম বলছে অন লাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট তারিখ থাকে। তা বাড়াতে গেলে নিয়ামক সংস্থার অনুমতি লাগে। ঠিক সেরকম অফ লাইন অ্যাডমিশন করতে গেলেও, নিয়ামক সংস্থা থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। আর এখানেই দুর্নীতির শিকড় লুকিয়ে রয়েছে। ইডির আধিকারিকদের দাবি, তাঁরা জানতে পেরেছেন অধিকাংশ ডিএলএড কলেজে অন লাইনে ভর্তি শেষ হওয়ার পর অফ লাইনে ভর্তি চলত। এটাই নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। ইডি’র দাবি, কলেজগুলি সিট ফিল আপ করতেই অফ লাইন অ্যাডমিশন চালাত। আর তাদের এই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন খোদ মানিকবাবুই। অর্থাৎ এই মানিকই ওই ৩১ কোটি টাকা তুলেছেন কলেজগুলি থেকে। সেই তাকা গেল কোথায়? রয়েছেই বা কোথায়? সেটাই এখন খতিয়ে দেখছেন ইডির আধিকারিকেরা।