নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতসকালে তৃণমূল নেতার বাড়িতে CBI হানা। তাও যা তা কাউন্সিলর তিনি নন। রীতিমত হেভিওয়েট। তারওপর বিধাননগর পুরনিগমের(Bidhannagar Municipal Corporation) মেয়র পারিষদ সদস্য এবং দলের(TMC) যুব সংগঠনের দমদম ব্যারাকপুরের সভাপতিও। তারওপর আবার তাঁর স্ত্রী এলাকারই বিধায়িকা ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী। এহেন নেতার বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের হানাদারি অনেক জল্পনাই উস্কে দিয়েছে। তিনি দেবরাজ চক্রবর্তী(Debraj Chakrabarty)। অদিতি মুন্সির(Aditi Munshi) স্বামী। এদিন সকালে দেবরাজের বাড়িতে হানা দেওয়ার আগেই CBI কলকাতা পুরনিগমের ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং পুরনিগমের তৃণমূলের মুখ্যসচেতক বাপ্পাদিত্য দাসগুপ্তের বাড়িতেও হানা দেয়। কিন্তু রাজনীতির জগতে বাপ্পাদিতেয়ের চেয়েও চোখ ধাঁধানো উত্থান দেখা যায় দেবরাজের কেরিয়ারে।
কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর আপ্তসহায়ক ছিলেন এই দেবরাজ। ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতিও। ২০১৩ সালে বিধাননগর পুরনিগম এলাকায় একটি উপনির্বাচন হয়েছিল। সূত্রের খবর, তাতে টিকিট চেয়ে পূর্ণেন্দুর কাছে দরবার করেছিলেন দেবরাজ। তৃণমূল তাঁকে তখন টিকিট দেয়নি। পরে ২০১৫ সালের নির্বাচনের সময়ে ফের ভোটে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন দেবরাজ। টিকিট না পেয়ে দল ছেড়ে দেন। সেই সঙ্গে ছেড়ে দেন পূর্ণেন্দু বসুর আপ্তসহায়কের কাজও। বিধাননগরে ভোটে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে তৎকালীন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেনের সঙ্গে দেবরাজের বিবাদ চরমে উঠেছিল। জানা যায়, সেই বিবাদের জেরেই তৃণমূলের টিকিট পাননি তিনি। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের হাত ধরেন দেবরাজ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর হাত থেকে দেবরাজ তুলে নেন কংগ্রেসের পতাকা। বিধাননগর পুরনিগম এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেসের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।
ভোটের দিনই দেবরাজকে গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। বন্দি অবস্থায় তাঁকে ভোটে লড়তে হয়েছিল। ভোটে জিতে বিধাননগরের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এই যুব নেতা। জামিনে মুক্ত হয়ে কাউন্সিলর হিসাবে শপথ নেন তিনি। সেই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ণেন্দু বসুও। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই ‘হাত’ ছেড়ে ফের ঘরের ছেলে ফিরে আসেন ঘরে। তৃণমূলে ভবনে এসে তৃণমূলের তৎকালীন যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলে নেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত দেবরাজ। ধীরে ধীরে রাজনীতির ময়দানে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছেন তিনি। বিধাননগর তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূলের এক জন ‘দাপুটে’ নেতা হিসাবে পরিচিতও হয়েছেন।
কীর্তনশিল্পী অদিতি মুন্সীর সঙ্গে দেবরাজের বিয়ে হয় ২০১৮ সালে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দমদমের সাংসদ সৌগত রায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন অদিতি। রাজারহাট গোপালপুর কেন্দ্র থেকে পূর্ণেন্দু বসুকে সরিয়ে তৃণমূল দেবরাজের স্ত্রীকে টিকিট দেয়। জল্পনা ছড়িয়েছিল, অদিতিকে টিকিট দেওয়ার জন্য দেবরাজই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিধাননগর পুরনিগমের ভোটে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হয়ে মেয়র পারিষদ হন অদিতির স্বামী দেবরাজ। হয়েছেন মেয়র পারিষদ সদস্যও।