নিজস্ব প্রতিনিধি: আম্ফানের স্মৃতি এখনও টাটকা রয়েছে। সেই প্রবল সামুদ্রিক ঘূর্নিঝড়ে কার্যত লন্ডভন্ড হয়েছিল শহর কলকাতার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। কোথাও গাছ উপড়ে, কোথাও ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে আবার কোথাও বিদ্যুৎবাহী তার ছিঁড়ে দক্ষিন কলকাতার নানা অংশে বিদ্যুৎ পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটেছিল। কোথাও ২দিন, কোথাও ৪ দিন আবার কোথাও কোথাও এক সপ্তাহেরও বেশি চময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলেছিল। কিন্তু এর থেকেও মর্মান্তিক ছবি ছিল যে ওই সময়ে কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় অকালেই বেশ কিছু প্রাণ ঝরে গিয়েছিল বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে। সাম্প্রতিক কালে ভারী বৃষ্টিতে কলকাতা ও শহরতলি এলাকাতেও আমরা বেশ কিছু প্রাণ ঝরে যেতে দেখেছি জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনায়। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শনিবার সিইএসসি ও কেএমসি-কে কার্যত হুঁশিয়ারি দিলেন কলকাতার পুরনিগমের প্রধান প্রশাসক তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘কেউ যদি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় তাহলে আমি ছাড়ব না।’
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে চেতলায় ভোট প্রচারে নেমেছিলেন ফিরহাদ। সেখানে প্রচারের মাঝেই তিনি কেএমসি ও সিইএসসি-কে এই হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় খোলা তার পড়ে রয়েছে। আমি সিইএসসি ও কেএমসি’র কমিশনারকে বলেছি, কেউ যদি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় তাহলে আমি কিন্তু ছাড়ব না। খোলা তার থাকলেও এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি। সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ৩০ তারিখ মানুষ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে বড় ব্যবধানে জিত হবে। কারণ, বৃষ্টিবাধা আসতে পারে। আসন্ন বৃষ্টির জন্য পুরসভা পুরোপুরি ভাবে তৈরি রয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে তাতে ওয়াটার লগিং হতেই পারে। শুধু আমাদের এখানে নয়, বম্বে, দিল্লি, আহমেদাবাদ, মাদ্রাজ- সব জায়গাতেই জল জমে। কারণ, মেঘ ভেঙে বৃষ্টি হচ্ছে। এই ধরনের বৃষ্টি হবে কোনও আরবান প্লেসে, আগে বুঝতে পারিনি। যদি এই বৃষ্টিকে সামাল দিতে হয় তাহলে যে ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরি করতে হবে তাকে দশ হাজার থেকে পনেরো হাজার কোটি টাকা লাগবে শুধু কলকাতাতেই। এই জল বার করতে যে বড়ো পাইপ বসাতে হবে তারও জায়গা নেই কলকাতায়।’
উল্লেখ্য, গত শেষ চার দিনে কলকাতা সহ রাজ্যের নানা জেলায় প্রায় ১৪জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে এদিন ফিরহাদ হাকিম সরাসরি আক্রমণ করলেন কলকাতা ও শহরতলি এলাকায় বিদ্যুৎ বণ্টনকারী সংস্থা সিইএসসিকে। তবে এদিন তিনি এও জানান, সিইএসসি-কে সতর্ক করেও লাভ হচ্ছে না। তবে এবার সতর্ক থাকতে হবে পুর প্রশাসককেও। অনেকেই মনে করছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ওইসব মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করতে ও মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর জেরেই ফিরহাদও পাল্টা চাপ দিলেন সিইএসসিকে।