নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রস্তুতিটা শুরু হয়ে গিয়েছিল এক মাস আগেই। সেটাই চূড়ান্ত আকার নিয়েছিল রবি সন্ধ্যায়। জায়গায় জায়গায় রাত জাগা, পিকনিক, জায়েন্ট স্ক্রিনে ভগবানকে চাক্ষুষ করার প্রস্তুতি তুঙ্গে উঠেছিল। কার্যত বিকাল থেকেই শহরের রাস্তাঘাট ক্রমশ ঘরমুখো হয়ে পড়ে। কেউ টিভির সামনে, কেউ হাতের মোবাইলে কেউ বা পাড়ার জায়েন্ট স্ক্রিনের সামনে নিজেকে বন্দী করে ফেলেছিলেন। সেই সঙ্গে সাদা নীলের শহরের প্রায় প্রতিটি অলিগলি ঢাকা পড়ে গিয়েছিল সূর্য মামার মুখ থাকা আকাশ নীল পতাকায়। সবার চোখে একজনের দিকেই, তিনিই তো ভগবান, এ যুগের ফুটবলের রাজপুত্র। সময় যতই এগিয়েছে উন্মাদনা ততই বেড়েছে শহরজুড়ে। খেলার ২২ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল এল সেই ভগবানের পা দিয়েই। আর সেই গোল আসা মাত্র সাদা নীলের শহরে শুরু হয়ে গেল অকাল দেওয়ালির উদযাপন। এটাই শহর কলকাতার(Kolkata) রবি রাতের(Sunday Night) ছবি। আর্জেন্টিনার(Argentina) বিশ্বজয়ের শরিক এই শহরও।
#Kolkata right now ? pic.twitter.com/mkOfcKCCif
— ইন্দ্রজিৎ | INDRAJIT (@iindrojit) December 18, 2022
ফিফার ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপের(Fifa World Cup Foorball 2022) আসর এবার বসেছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের বুকে। দূরত্ব ও খরচ তুলনায় কম হওয়ায় এবার কাতেরে প্রচুর বাঙালি গিয়েছিলেন খেলা দেখতে। যারা যাননি তাঁরা গত এক মাস ধরে রাত জেগেছেন ভগবানের পায়ের যাদু দেখার জন্য। কলকাতায় ব্রাজিল সমর্থকদের পাল্লাই চিরকাল ভারী থেকেছে। কিন্তু এই প্রথম কলকাতাজুড়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আকাশ নীলের জোয়ার। অলি গলি মুখ ঢেকেছিল আকাশ নীল সাদা পতাকায়। আর ছিল ভগবানের পোস্টার। নাম তাঁর মেসি। লিওনাল মেসি(Lionel Messi)। সেই মেসি ম্যানিয়ায় ভাসিয়েছে কলকাতাকে গত এক মাস ধরে। এই শহর রবিবার সকাল থেকেই প্রহর গুণতে শুরু করেছিল মেসির জন্য গলা ফাটাতে, ঝর ঝর করে কাঁদতে, আবেগে একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে। বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা যতই নেমেছে ততই শহরের সব রাস্তাই ঘরমুখো হয়েছে। কিন্তু পাড়ায় পাড়ায় তখন শুরু হয়ে গিয়েছিল রাত জাগার পালা। মেসির জন্য লড়াই করার পালা।
Seems #Kolkata has won the ?
#Arg ? pic.twitter.com/1YsYMcGnZR
— ইন্দ্রজিৎ | INDRAJIT (@iindrojit) December 18, 2022
আর্জেন্টিনার প্রথম দুটি গোলই কলকাতার বুকে শুরু করে দিয়েছিল অকাল দেওয়ালির উদযাপন। শুরু হয়ে গিয়েছিল মেসির ছবি নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মিছিল, মুড়ি মুড়কির মতো বোম ফাটানোর পালা। কেউ একটুও আপত্তি তোলেনি। কেউ একটুও রেগে যাননি। আসলে এ শহরের প্রতিটি ফুটবল প্রেমী দেখতে চেয়েছিলেন ভগবানের হাতেই উঠুক বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সের ঘুরে দাঁড়ানো শহরের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছিল। অনেকেই হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিলেন এই ভেবেই যে জেতা ম্যাচ এই বুঝি হাত ছেড়ে বেড়িয়ে যায়। তীরে এসে না তরী ডোবে। না সেই তরী ডোবেনি। কেননা সেই মেসিই তো গোল দিয়ে এগিয়ে গেলেন। এমবাপে সেই গোলও শোধ করলেন পেনাল্টিতে। আবারও রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। টাইব্রেকারে শেষ হাসি হাসলেন সেই ফুটবলের রাজপুত্র যিনি ১৮ ডিসেম্বরের পরে বিশ্ব ফুটবলে ভগবানের আসনে বসে গেলেন। কলকাতা তখন কাঁপছে বোম ফাটার আওয়াজে, মানুষের আনন্দ উল্লাসে উচ্ছ্বাসে। ‘মেসি মেসি মেসি’ অলিগলিতে একটাই নাম। ঝর ঝর করে কাঁদছে ভক্ত, ‘গুরু তুমি আজ ভগবান হয়ে গেলে’। উচ্ছ্বাস বাংলার শাসক শিবিরেও। কেননা লালকে হারিয়ে আকাশ নীলের জয়। সেলিব্রেশনেও তাই সাদা নীলের শহরে আকাশ নীলের ঢেউ। কলকাতা সাক্ষী থাকল মেসি ম্যানিয়ার, কলকাতা সাক্ষী থাকল মধ্যরাতের রূপকতার। সাক্ষী থাকল ভগবানের হাত ধরে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়ের।
And the moment arrived. And the moment sealed by #Argentina #Messi? . And the moment too when the loud cheer out of joy and relief crushed , chewed and digested the French toast. #ArgentinaVsFrance pic.twitter.com/f6y21ZOCUZ
— Tamal Saha (@Tamal0401) December 18, 2022
Look how #Kolkata is celebrating its unadulterated love for #Messi?. The victory is theirs but #Messi? is ours and so is the victory. pic.twitter.com/b1l5ZuD26p
— Tamal Saha (@Tamal0401) December 18, 2022