-273ºc,
Saturday, 3rd June, 2023 4:25 am
নিজস্ব প্রতিনিধি: বিপর্যয় ধেয়ে এসেছে উত্তরাখণ্ডের(Uttarakhand) পাহাড়ি শহর যোশীমঠের(Joshimath) ওপর। কার্যত দেশের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে এই প্রাণবন্ত শহর। মনে করা হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা অগ্রাহ্য করে প্রকৃতি ধ্বংস করে যেভাবে নগরায়ণ ও কংক্রিটের জঙ্গল গড়ে তোলা হয়েছে তার জেরেই এই বিপর্যয় ধেয়ে এসেছে পাহাড়ের এই শহরে। সেই বিপর্যয়কে আরও তরান্বিত করেছে বিষ্ণুপ্রয়াগের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। সেই যোশীমঠ থেকে হাজার কিমি দূরে থাকা খাস কলকাতার(Kolkata) কানের পাশে থাকা সল্টলেক(Saltlake) ও নিউটাউনও(Newtown) কিন্তু খুব একটা নিরাপদে নেই। বরঞ্চ এই দুই এলাকারই বিপদ ক্রমশ বাড়ছে। অন্তত বিশেষজ্ঞদের তেমনটাই অভিমত। তাঁদের ধারনা আজ যোশীমঠে যা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে আগামী দিনে সেটা সল্টলেক বা রাজারহাট নিউটাউনেও দেখতে পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন সল্টলেকের এফডি ব্লকে ভয়াবহ আগুন, পুড়ে ছাই শতাধিক দোকান
কিন্তু কেন এমন আশঙ্কা? সল্টলেকের বাংলা নাম লবণহ্রদ। কেননা আজ যেখানে সল্টলেক মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় ছিল নোনা জলাভূমি। যা মূলত পাঁক, কাদা আর বালির সমন্বয় ছিল। বিদ্যাধরীর খালের মাধ্যমে সেই নোনা জলাভূমিতে নিত্যদিন ঢুকত জোয়ারের জল। অন্যদিকে রাজারহাট নিউটাউনের জমিও জলাভূমিই ছিল। তবে পর্বর্তীকালে সেখানে ধানি জমিও তৈরি হয়। এই দুটি এলাকাতেই কিন্তু শক্ত মাটি নেই। কার্যত নরম পাঁক মাটির ওপর এই দুই শহর এলাকা গড়ে উঠেছে। দুটি ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞদের সাবধানবাণী ছিল, কোনও ভাবেই এই দুই শহরের ভার যেন বেশি না হয়। কেননা ভার বেশি হলেই তা মাটিতে বসে যেতে শুরু করবে। ঘরবাড়িতে ফাটল ধরবে এবং তা ভেঙে পড়তে পারে। সল্টলেক তৈরি করার সময় সে কথা মাথায় রেখেছিলেন বাংলার রূপকার তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায়। সেই কারণে সল্টলেকে ২তলা বাড়ির প্রধান্য বেশি। আর আছে ৩ থেকে ৪ তলার ছোট ছোট ফ্ল্যাটের সরকারি কোয়াটার। কিন্তু বাম জমানা থেকেই বিশেষজ্ঞদের সেই নিয়ম আর মানা হচ্ছে না সঠিক ভাবে। নিউটাউনের ক্ষেত্রে তো নয়ই। আর তারই পরিণতি হিসাবে দুটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন কিছু বাড়ি যার বয়স ২০ বছরও হয়নি সেই সব বাড়িতে ফাটল ধরে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন লিজে নেওয়া সরকারি জমি ফেলে রাখা যাবে না, সিদ্ধান্ত নিচ্ছে নবান্ন
বিশেষজ্ঞদের দাবি, সল্টলেক ও নিউটাউনের বুকে বেশ কিছু ভারী নির্মাণ হয়েছে যার জেরে দুইটি এলাকার নীচে থাকা নরম মাটি সরে যেতে শুরু করেছে। খালি চোখে এই মাটি সরে যাওয়া ধরা পড়বে না। কেননা এই সরণ কয়েক মাইক্রো মিটার গতিতে হচ্ছে মাত্র। কিন্তু নিরন্তর তা হচ্ছে। যার জেরে আগামী দিনে সল্টলেকের বুকে, নিউটাউনের বুকে বাড়িতে বাড়িতে ফাটল ধরার সংখ্যা আরও বাড়বে। শুধু সল্টলেক বা নিউটাউনই নয়, পূর্ব কলকাতার জলাভূমি বুজিয়ে একের পর এক বহুতল গড়ে উঠছে। তপসিয়া, রুবি, আনন্দপুর, সন্তোষপুর, কালিকাপুর, পাটুলি, গড়িয়া, নরেন্দ্রপুরের মতো এলাকায় বাইপাসের ধারে একের পর এক বহুতল মাথা তুলছে। কিন্তু মনে রাখা উচিত এই সব বহুতলের ভার নেওয়ার মতো ক্ষমতা কিন্তু সেখানকার মাটিতে নেই। সেই সঙ্গে কাদামাটির ওপর ভেসে থাকা এই সব এলাকায় ভূমিকম্প হলে তখন কম্পন কাদামাটিতে ঘুরে ঘুরে আরও শক্তি বাড়িয়ে তা ওপরে উঠে ধাক্কা মারবে। তখন কিন্তু এই সব বহুতম কার্যত তাসের ঘরেই মতোই ভেঙে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক কালের ভূমিকম্পে এই সব বহুতলের বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু বেশ ভয় ধরানোর মতোই। কলকাতার বিপদ আরও বাড়িয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। বিপর্যয় নেমে এসেছে বউবাজারের বুকে। এই বিপদ কিন্তু আগামী দিনে আরও প্রলম্বিত হতেই পারে। সেক্ষেত্রে বউবাজারের মতোই পরিণতি ঘটতে পারে শহরের অনান্য এলাকাতেও।