নিজস্ব প্রতিনিধি: ভয়াবহ দুর্ঘটনা(Accident) কেড়ে নিয়েছে কলকাতা(Kolkata) পুরনিগমের ৭৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ সদস্য রাম পেয়ারে রামের(Ram Peyare Ram) ছেলে রাম কিঙ্কর রামকে(Ram Kinkor Ram)। শনিবার রাত ৯টা নাগাদ খিদিরপুরের(Khidirpur) বাবুবাজার(Babubazar) এলাকায় সার বোঝাই একটি লরি উল্টে পড়ে রাম কিঙ্করের গাড়ির ওপরে। সেই সময় ওই গাড়িতে রাম কিঙ্কর ছাড়াও আরও ২জন ছিলেন। সার বোঝাই লরির চাপে চার চাকার ছোট গাড়িটি কার্যত দেশলাই বাক্সের মতো চিঁড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যায়। তাতেই কার্যত পিষে গিয়ে মারা যান রাম কিঙ্কর। আর এই দুর্ঘটনা ঘিরেই এখন স্থানীয় বাসিন্দারা কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কলকাতা পুলিশকেই কাঠগড়ায় তুলছেন। তাঁদের দাবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ রাস্তা ঠিকঠাক রাখলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। সেই সঙ্গে কলকাতা পুলিশ ঠিক ভাবে নজরদারির কাজ করলে ওভারলোডেড ওই লরি আগেই আটকে যেত।
জানা গিয়েছে, শনিবার রাত ৯টা নাগাদ, খিদিরপুরের কাটাপুকুর মর্গের দিকে একটি গ্যারাজে ছিলেন রাম কিঙ্কর। সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। সেই সময়ই উল্টোদিক থেকে ধেয়ে আসছিল সারবোঝাই লরিটি। তাতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত সার বোঝাই ছিল বলে অভিযোগ। তার ওপর রাস্তার অবস্থাও ছিল বেহাল। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লরিটি রামকিঙ্করের গাড়ির ওপর পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর গাড়ির লরির নিচে পিষ্ট হয়ে যায় গাড়িটি। দুমড়ে মুচড়ে কার্যত খেলনা গাড়ির আকার ধারণ করে। তাই জানলার বাইরে দিয়ে রাম কিঙ্করের হাত ঝুললেও, তাঁকে চেনা যায়নি। বোঝা যাচ্ছিল না গাড়ির নম্বর প্লেটও। পরে ক্রেন এনে প্রথমে লরিটিকে তোলা হয়। তার পর গ্যাসকাটার দিয়ে গাড়ি কেটে রামকিঙ্করকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তাঁর সঙ্গে থাকা আরও ২জন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনার পর এসএসকেম হাসপাতালে ছুটে যান কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেখান থেকে বেরনোর সময় তিনি বলেন, ‘পোর্টের ভিতর দিয়ে গোডাউন থেকে সরকারের একটি রাস্তা রয়েছে। ওইখান দিয়েই যাচ্ছিল ছেলেটি। আমাদের কাউন্সিলর রামপেয়ারে রামের ছেলে রামকিঙ্কর। ৩৮ বছর বয়স। লোডেড ১০ চাকার লরি ওর গাড়িতে উঠে যায়। গাড়ি সুদ্ধ পিষে গিয়েছে বাচ্চা ছেলে।’ যে এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা কলকাতা বন্দরের এলাকার মধ্যে পড়ে। শনিবার বিকেলে মুষলধারে বৃষ্টির পর রাত ১০টা পর্যন্ত সেখানে হাঁটু পর্যন্ত জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। এ ছাড়াও খানাখন্দে ভরা রাস্তাটি। তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লরিটি উল্টে যায় বলেই এখন দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর এই কারণেই তাঁরা ক্ষুব্ধ বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপরে। দুর্ঘটনার জেরে রবিবার সকালে কিছু ভাঙা বোল্ডার এনে ফেলা হয়েছে ঘটনাস্থলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকার প্রায় সব রাস্তাই বেহাল। রাতে সেখানে আলোও থাকে না। রাস্তায় বড় বড় গর্ত, বৃষ্টি হলেই সেকানে জমে জল। তাই এই রাস্তায় এর আগেও একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার একদিকে লরি দাঁড়িয়ে থাকার জেরে ও এরকম আলোহীন খন্দপথের দৌলতে কার্যত গোটা এলাকাই রাতের বেলা মারণফাঁদে পরিণত হয়, শনিরাতে যার বলি হলেন কাউন্সিলর পুত্র।